কওমী সনদের স্বীকৃতি ও এক মেয়ের বিয়ের দু'টি অনুষ্ঠান

কওমী সনদের স্বীকৃতি ও এক মেয়ের বিয়ের দু'টি অনুষ্ঠান

মোঃ তাজুল ইসলাম
সিটি টিভি নিউজ,১৩/০৪/২০১৭

১.
স্কুলের বৃক্ষ রোপন কর্মসূচীতে অতিথি হিসেবে উপস্হিত হয়েছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।অতিথি কর্তৃক উদ্বোধনের জন্য 'বৃক্ষ রোপনের স্থান' নির্ধারন করতে নতুন হেড মাষ্টার স্কুলের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।প্রতিষ্ঠানের প্রবীন দপ্তরী এগিয়ে এসে বললেন, স্যার ঐ স্থানে বৃক্ষ রোপন করুন, কয়েক বছর অাগে ঐ স্থানেই বৃক্ষ রোপন করা হয়েছিল!

২.
ঘনিষ্ট পরিচিত এক ভদ্রলোক তাঁর মেয়ের বিয়ে অনুষ্ঠানের দাওয়াত দিলে বললাম,অাপনার দ্বিতীয় মেয়েকেও বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে?
বললেন,না বড় মেয়ে।
শুনে বেশ কষ্ট পেলাম।
গত বছর বিয়ে দেয়া ঐ বড় মেয়েকে এক বছরের মাথায় দ্বিতীয় বার দিতে হচ্ছে,সত্যিই কষ্টকর।অার কথা বাড়িয়ে বেচারাকে বিব্রত করতে চাইলাম না।
তিনি বিদায় নেয়ার পর অামার পাশে বসা উনার এক ঘনিষ্ঠজনের কাছে জানতে চাইলাম,কী সমস্যায় মেয়েটির প্রথম বিয়ে ভেঙ্গে গেল।
তিনি বললেন,অাগের বরের কাছেই মেয়েটিকে দ্বিতীয় বার বিয়ে দিতে হচ্ছে!
অামি সবিষ্ময়ে জিজ্ঞেস করলাম, তাহলে মধ্য খানে মেয়েটিকে হিল্লে বিয়ের মাধ্যমে অারেকটি লোকের সাথে 'সাময়িক সংসার' করতে হয়েছে?
এবার তিনি এবার হেসে বললেন- না, বিয়ে ভাঙ্গেনি, হিল্লে বিয়েরও প্রয়োজন পড়েনি।ঘটনা হলো গত বছর যখন লন্ডন প্রবাসী ছেলেটি সিলেটের একটি চায়নিজ রেষ্টুরেন্টে প্রায় শতাধিক অাত্মীয়-স্বজন নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন,তখন ছেলে পিতা দেশে অাসতে পারেননি। বিয়ের দু'সপ্তাহ খানেক পর ছেলে তাঁর নব বিবাহিতা বধুকে শ্বশুরালয়ে রেখে লন্ডন চলে যায়। এক বছর পর ছেলে তাঁর পিতাসহ দেশে অাসলে, মেয়ের পিতার কাছে ছেলের পিতা অাবদার রেখে বলেন-
"বেয়াই গত বছর ছেলের বিয়ের সময় ইচ্ছে থাকার পরও দেশে অাসতে পারিনি।এ জন্য ছেলের বিয়ে অানুষ্ঠানে নিজেতো উপস্থিত থাকতে পারিইনি অামার অনেক অাত্মীয়-স্বজনকেও ঐ সময় দাওয়াত করা যায়নি।তাই ইচ্ছে করেছি এবার একটু ঘটা করে অনুষ্ঠানেটি অাবার করে নেব।জানি অাপনার কষ্ট হবে,অামি না হয় খাবার-দাবারের অায়োজনের খরচ-পাতিতে কিছুটা শরীক থাকবো।"
তাই লন্ডনী বেয়াইর মন রক্ষায় এই দ্বিতীবার 'বিয়ের অনুষ্ঠান'।
ঘটনা শুনে অাশ্চর্যান্নিত হলাম এবং স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।

'প্রধান মন্ত্রী' শেখ হাসিনা কর্তৃক 'স্বীকৃতি প্রাপ্ত' কওমী মাদরাসাকে নতুন করে স্বীকৃতি দেয়া প্রসঙ্গে এই  ঘটনা দু"টি মনে পড়ে গেলো।

বিগত ৪ দলীয় জোট সরকারের শেষ পর্যায়ে জামায়াত ও ইসলামী জোট নেতৃবৃন্দের এক ধরণের চাপের মুখে বেগম খালেদা জিয়া কওমী মাদরাসার স্বীকৃতি ঘোষনা করেন।যা পরবর্তীতে গেজেট অাকারর প্রকাশিত হয়।সরকারের মেয়াদ স্বল্প থাকায় পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়নি।স্বীকৃতির ঘোষনার বিষয়ে পর্দার অন্তরালে তৎকালীন সমাজ কল্যান মন্ত্রী শহীদ অালী অাহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষা মন্ত্রীরসাথে বিশেষ দুতিয়ালি করেন।
  অাল্লামা সাঈদী সাহেব সে সময়ে কওমী মাদরাসার স্বীকৃতির জন্য সংসদে দাবী উত্থাপন করেন।এবং তিনি সংসদে ও বিভিন্ন মাহফিলে বলেন,সরকারী মাদরাসাকে যদি অামার একটি চোখের মতো দেখি,তা হলে অামার অপর চোখটি হচ্ছে কওমী মাদরাসা।যদিও সে সময় কওমী মাদরাসার কতিপয় অালেম এটাকে কওমী মাদরাসার স্বকীয়তা ধ্বংসে জামায়াতের নীল নকশা বলে প্রকাশ্যে মন্তব্য করেছিলেন।

প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ২য় বার কওমী সনদের স্বীকৃতি ঘোষনার পর সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যমে পক্ষে-বিপক্ষ বেশ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।সয়ং কওমী পন্থীদের মধ্যেও দু'পক্ষে বক্তব্য-মন্তব্য পরিলক্ষিত হচ্ছে।স্বীকৃতিকে কেন্দ্র করে অামার একটি মন্তব্য ফেইসবুকে দিয়েছিলাম।যার মূল ভাব সঠিক ভাবে অনুধাবন করতে না পেরে একজন এতে দুঃখ পেয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন।অারেক জন অামার মন্তব্য কোট করে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।অবশ্য অামার কোন বক্তব্য বা মন্তব্যে যে কারো প্রতিক্রিয়া প্রকাশের অধিকার অাছে।

অামার মন্তব্য ছিল-
"অপু বিশ্বাস 'স্বীকৃতি' পেয়েছেন।অারেক দল 'স্বীকৃতি' পেতে গনভবনে।দেখা যাক উভয় স্বীকৃতি কতটুকু টিকে!"

এই কথা দ্বারা অামি বুঝাতে চেয়েছি যে, বিয়ের অাট বছরের মাথায় সন্তান হবার পর অপু বিশ্বাস-কে সাকিব খানের স্ত্রীর স্বীকৃতি দেয়া যে ভাবে ছিল 'চলচ্চিত্রের ষ্ট্যান্টবাজি',ঠিক ৪দলীয় জোট সরকার কর্তৃক স্বীকৃতি দেয়ার ১১বছর পর কওমী সনদের অাবার স্বীকৃতি ঘোষনা 'রাজনৈতিক ষ্ট্যান্টবাজি'।
তাই উভয় স্বীকৃতি বাস্তবে কতটুকু টিকে তা দেখার বিষয়।অার এটাই ছিল অামার মন্তব্যের অন্তর্নিহিত ভাব।

অাগের সরকারের পক্ষে পূর্বেই যে বিষয়ে গেজেট প্রকাশিত হয়েছে,সেখানে পরবর্তী সরকারের কাজ হচ্ছে এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহন করা।নতুন করে ঘোষনার কোন মানে নেই।

শেখ হাসিনার সাথে অাল্লামা শফী সাহেবের বৈঠককে অনেকে মেনে নিতে না পেরে যে ভাবে অাপত্তিকর মন্তব্য করছেন তা সত্যিই দুঃখ জনক।মনের ক্ষোভ প্রকাশ

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.