ভারত সফরে এরদোয়ানকে কেন্দ্র করে যারা প্রতিবাদে সরব হচ্ছেন, তাদের জন্য
ভারত সফরে এরদোয়ানকে কেন্দ্র করে যারা প্রতিবাদে সরব হচ্ছেন, তাদের জন্য আগের লেখাটি আবার পোষ্ট করলাম।
- সুতীর্থ মুখার্জী 4.5.2017
তুরস্কের ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের বিশ্লেষণে, সংবাদ মাধ্যম তথা লিবারাল স্যেকুলার গণতন্ত্রের পূজারী এবং ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশনের ঠিকাদার বিশ্লেষকরা অদ্ভুত এক দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন। বিষয়টি এঁরা না গিলতে পারছেন, না ফেলতে পারছেন। একদিকে গণতন্ত্র হন্তা সেনাবাহিনী, অন্যদিকে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত শাসক রিসেফ তাইয়েফ এরদোয়ান । যে এরদোয়ান আবার ব্যক্তিগতভাবে প্রাক্টিসিং মুসলিম। সাম্যবাদ, শ্রেণীহীন সমাজের স্বপ্নে বিভোর বামবন্ধুদের এই অসহায় নখ আঁচড়ানো দেখে কয়েকটা কথা না বলে থাকা যায় না।
বাধ্যবাধকতার জায়গা থেকে ক্যু সমর্থন না করলেও মিডিয়া এবং তথাকথিত স্যেকুলার গণতন্ত্রপ্রেমী প্রগতিশীলদের বিশ্লেষণে ব্যর্থ ক্যু-এর প্রতি কোথাও যেন সহানুভূতি ও আফসোস ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বিশ্লেষকরা তাঁদের বিশ্লেষণে এরদোয়ানের ক্যারিশমা উপেক্ষা করে বরং তাঁকেই বিভিন্ন প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করে চলেছেন। তাঁরা এরদোয়ানকে ধর্মান্ধ উগ্র ইসলামিস্ট শাসক হিসেবে আখ্যায়িত করে চলেছেন কিন্তু খোদ তুরস্কের মানুষ কি আদৌ এমনটা মনে করেন? নির্বাচিত এরদোয়ানের সরকার নয়, শুধু দেশের গণতন্ত্র রক্ষার জন্যই কি তারা বন্দুক ট্যাঙ্কের নলের সামনে, এফ-১৬ বোমারু বিমানের তলায় প্রাণ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন? স্মার্টফোনের ফেসটাইমে এরদোয়ানের ঘোষণার মাত্র দশ মিনিটের মধ্যে এমনি এমনিই কি ত্রিশ লাখ মানুষ পথে নেমেছিলেন? ৫০ বছরের ব্যবধানে এর আগেও তো চারবার সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে। কই, তখন তো এমন দৃশ্য দেখা যায়নি ! কজন শাসক কিভাবে দেশ তথা বৃহত্তর পরিবারে বড়দাদা হয়ে উঠতে পারেন, সেইরাতের এই অভূতপুর্ব ঘটনাগুলোই তার প্রমাণ, তা সে যতই আনন্দবাজারের অপছন্দ হোক না কেন।
ইতিহাসের বিচারে সাধারণত অভ্যুত্থানের মূল প্রেক্ষিত হয় অর্থনৈতিক অবস্থা বা বলা ভালো অর্থনৈতিক অব্যবস্থা। মহান প্রগতিশীল, ড্যাশ ক্যাপিটালে অভ্যস্ত বন্ধুরা তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থানের বিশ্লেষণকালে কিন্তু ঘুণাক্ষরেও এরদোয়ান জমানায় তুরস্কের অর্থনৈতিক উন্নতি-অবনতির উপর আলোকপাত করছেন না। অথচ এই অর্থনৈতিক বিষয়ের উপর ভিত্তি করেই এরদোয়ানের এমন জনপ্রিয়তা। খাদে পড়ে যাওয়া তুরস্কের অর্থনীতিকে তিনি দৃঢ় সুশাসনের মাধ্যমে অত্যন্ত মজবুত করেছেন। বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০০২ সালে এরদোয়ান যখন ক্ষমতায় আসেন তখন দেশে দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করা মানুষের হার ছিল ৩০.৩ শতাংশ। যেখানে ২০১৪ সালে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১.৬৮ শতাংশ। না, ভারতের মত ২০ টাকার চালাকির হিসেব নেই। বিশ্ব ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী এখানে ১.৯ ডলার অর্থাৎ ভারতীয় টাকায় প্রায় ১৩৩ টাকা আয়ের নীচের মানুষকে দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী হিসেবে ধরা হয়েছে। এরদোয়ান যখন ক্ষমতা দখল করেন তখন মুদ্রাস্ফীতি ছিল ভয়ানক। ২০০১ সালে এক পাউন্ডের বিনিময়ে একশ লিরা’র (তুর্কি মুদ্রা) বেশি পাওয়া যেত। কিন্তু এখন ২০১৬ তে ! এক পাউন্ডের বিনিময়ে মাত্র চার লিরা পাওয়া যায়। ২০০৯ সালে বিশ্ব বাজারে মন্দার সময়ে বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছিল ২৮ শতাংশের উপর। ২০১৬ সালের হিসেবে এই হার ১১ শতাংশেরও বেশি কমে ১৭ শতাংশ-তে এসে দাঁড়িয়েছে।
এ গেল অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ যার সামাজিক প্রভাব বর্ণনা করতে গেলে একটা বই অনায়াসে লেখা হয়ে যাবে এবং বলা বাহুল্য সে বই অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের কাছে একটা রোডম্যাপ বা সিলেবাস হিসাবে কাজে দেবে। এবার আসা মানবিক ব্যাপার। মানবতাবাদীদের ফেভারিট সাবজেক্ট -
তথাকথিত মানবতাবাদীরা বিশ্লেষণের সময় এরদোয়ানের মানবিক দিকগুলি একেবারেই এড়িয়ে যাচ্ছেন। যারা সিরিয়ার উদ্বাস্তু দূরাবস্থা নিয়ে মৌখিক হাহাকার করেন, তাঁরা কি জানেন না যে এই এরদোয়ানই তাঁর দেশে সবচেয়ে বেশি উদ্বাস্তুকে জায়গা দিয়েছেন ! যারা ফিলিস্তিনের গাজাবাসীদের জন্য দিনরাত বুক চাপড়ান, তাঁরা কি জানেন না যে এই এরদোয়ানই গাজাবাসীদের সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে থাকেন! 'তথাকথিত' মানবতাবাদীদের জেনে রাখা ভাল, ভারতের প্রতিবেশী মায়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমরা নির্যাতিত। সেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ দিশেহারা। দুর্বোধ্য ভাষা এবং অশিক্ষার কারনে যাদের নিজেদের দূরাবস্থা তুলে ধরার মত একজন প্রতিনিধিও নেই যে বা যারা তাদের সামান্য বক্তব্যটুকু মানুষের কাছে পৌঁছে দেবে। সাহায্য তো দূরের কথা, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বিন্দুমাত্র সহানুভূতির কথাও শোনা যায়না। আর 'ক্যামেরা থাকিতেও অন্ধ' মিডিয়ার কথা তো বাদই দিলাম। অথচ সেই রোহিঙ্গাদের জন্যই এরদোয়ান বিপুল পরিমান সাহায্যের সাথে তাঁর স্ত্রী এবং বিদেশমন্ত্রীকে মায়ানমারে পাঠিয়েছিলেন। যারা ভাবছেন, এরদোয়ান শুধু মুসলিমদের জন্যই সহযোগিতা করে থাকেন তাদের ভুলে গেলে চলবে না, গতবছর দুনিয়ার তৎকালীন একমাত্র হিন্দুরাষ্ট্র নেপালে ভূমিকম্পের সময় দফায় দফায় ত্রাণের সাথে উদ
কোন মন্তব্য নেই