খুব দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে সিলেট সিটি নির্বাচনের দৃশ্যপটঃ যে আট কারণে সম্ভাবনার শীর্ষে জামায়াত
খুব দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে সিলেট সিটি নির্বাচনের দৃশ্যপটঃ যে আট কারণে সম্ভাবনার শীর্ষে জামায়াত
সিটি টিভি নিউ, 20/07/2018
ইকবাল আহমদ চৌধুরী
এবার সিলেট সিটি নির্বাচনী ইস্যুতে সব থেকে আলোচিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।দেশের ৩য় বৃহৎ ও ২০দলীয় জোটের ২য় প্রধান এ রাজনৈতিক দল এবারই প্রথম খুব গুরুত্বের সাথে কোনো সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী দিয়েছে তাও আবার সিলেটে।
জামায়াত ২০দলীয় জোটের দ্বিতীয় বৃহৎ দল যারা জোট সম্পৃক্ত সকল আন্দোলনেই অগ্রভাগে নেতৃত্ব দেয় ও আন্দোলন পরিচালনা করে থাকে।
সে সুবাদে তারা এবার এগারোটি সিটি নির্বাচনে জোট প্রধান দল বিএনপি কে ছাড় ও সমর্থন দিয়ে পক্ষে কাজ করে একটি সিটিতে প্রার্থী দিতে যায়।কিন্তু বিএনপি তা নাকচ করে বরাবরের মতোই তাদের দলীয় প্রার্থীকে জোটের প্রার্থী হিসাবে সমর্থন নিতে চাইলে জামায়াতও তা প্রত্যাখ্যান করে এবং তাদের নির্বাচনী অবস্থান আরো শক্ত করে বিজয়ী হওয়ার চেষ্টায় কোমর বেঁধে নেমেছে।
২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালে সংসদে যেনতেনভাবে আইন সংশোধন করে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করা হয়। তখন থেকে চলছে ঢালাও প্রচারণা। ক্ষমতাসীনদের বক্তব্য বিবৃতি নানা রকম গালাগালের পাশাপাশি সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া কোন বিচার বিবেচনা ছাড়াই একতরফা প্রচারণায় মেতে উঠে।তাদের প্রচারণায় একরকম জামায়াতকে জঙ্গি ও যুদ্ধাপরাধী দলই সাব্যস্ত করা হয়।গঠিত হয় ট্রাইব্যুনাল সেখানে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড দেয়া হয় এবং তা কার্যকর করা হয়। আবার কোন কোন রায়ে নাক বাড়িয়ে জামায়াতকে ক্রিমিনাল অর্গানাইজেশন বলতেও কসুর করেনি।আর প্রশাসনযন্ত্র জামায়াত ও তার ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবিরের উপর চালিয়ে দেয় ইতিহাসের বর্বর নারকীয় তান্ডবের ষ্ট্রীমরোলার।
এমন দমন নীতি যা বাংলাদেশর ইতিহাসে আর ঘটেনি।মিছিল,মিটিংসহ সব ধরনের গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে তাদেরকে।দলের কেন্দ্রীয় অফিস,মহানগরী অফিসসহ এমনকি জেলা-উপজেলার অফিসগুলো পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়।রাস্তায় দেখামাত্র গুলীর নির্দেশ ছিল একমাত্র জামায়াত-শিবিরের জন্যই প্রযোজ্য।সরকারের দমন-পীড়নের শিকার হয়ে কয়েক শত নেতা-কর্মীকে এই আট বছরে জীবন দিতে হয়েছে, আহত হয়েছে হাজার হাজার নেতা-কর্মী যাদের অনেককেই বরণ করতে হয়েছে স্থায়ী পঙ্গুত্ব।লক্ষাধিক নেতা-কর্মীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে, হাজার হাজার মামলা ঝুলছে এই দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে।
বিগত আট বছর ধরে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের সর্বগ্রাসী একতরফা প্রচারণা এবং প্রশাসনযন্ত্র ব্যবহার করে জামায়াতকে প্রায় অবরুদ্ধ করে রাখা হলেও পরিস্থিতি এখন অনেকটাই পাল্টে গেছে।সিলেট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চায়ের দোকান, বাস-ট্রেন স্টেশনেও এখন নির্বিঘ্নে চলছে জামায়াত নিয়ে আলোচনা।কিছু নাস্তিক বাম ঘরনার সংবাদপত্র আর ইলেকট্রনিক মিডিয়ার একতরফা প্রচারণা যে,গোটা জাতির বক্তব্য নয়,যা ছিল সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর বিকৃত মানসিকতার প্রতিফলন তা সাধারণ জনগণ ঠিকই টের পেয়েছে ফলে তাদের অপপ্রচারের ফল হয়েছে উল্টো তার প্রমাণ গত
উপজেলা,পৌরসভা,ইউনিয়ন এবং বিভিন্ন সিটি কমিশনার নির্বাচনে জামায়াত প্রার্থীদের পক্ষে অভাবনীয় সাফল্য।উদাহরণস্বরূপ বলা যায় গত পাঁচ দফা উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ১৯৬টিতে বিজয়ী হয়েছে যার মধ্যে জামায়াতের ৩৬জন। সরকারদলীয়রা দখলী শক্তি ব্যবহার করে ২২৫টি চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছে।অপরদিকে পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২০দলীয় জোট প্রার্থীরা ২২৬টি উপজেলায় বিজয়ী হয়েছেন।এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর ১২০ জন এবং বিএনপি’র ১০৬ জন।সরকারদলীয়দের দখলে গেছে ১৫৩টি উপজেলার পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সরকারদলীয় ১৫৫ জন এবং ২০দলীয় জোটের প্রার্থীরা ১৭৮টি নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে জামায়াতের ৩৪ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রয়েছেন।
সবচেয়ে আলোচিত দুইটি ঘটনা হলো জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর সাবেক মন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর নিজ উপজেলা পাবনার সাঁথিয়া এবং দলের নায়েবে আমীর আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মোফাসসিরে কুরআন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর উপজেলা জিয়ানগর উপজেলার ফলাফল।পাবনার সাঁথিয়ায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সবগুলোতেই জামায়াতের প্রার্থীরা বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। মাওলানা নিজামী যদি যুদ্ধাপরাধী হতেন বা জামায়াত যদি যুদ্ধাপরাধী দল হতো তাহলে এভাবে জামায়াতকে মানুষ ভোট দিয়ে বিজয়ী করতো না। পিরোজপুরের জিয়ানগর উপজেলায় মাওলানা সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী আওয়ামী লীগ প্রার্থীর তুলনায় প্রায় চার গুণ ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এই জিয়ানগর উপজেলা হলো সংখ্যালঘু হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা।
বিশেষ করে তিনটি কেন্দ্র ছিল প্রায় ৯০ ভাগ হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা।সেখানেও সাঈদীর ছেলে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কয়েকগুণ ভোট বেশি পেয়ে।যদি আল্লামা সাঈদী সত্যিই যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত হতেন, হিন্দুদের ওপর যদি তিনি অত্যাচার করতেন তাহলে হিন্দুরা তার ছেলেকে এভাবে বিপুল ভোটে বিজয়ী করতো না।এথেকে নিঃসন্দেহে বলা যায় অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে ফলাফল হতো আরো তাৎপর্যপূর্ণ।চর দখলের কায়দায় কেন্দ্র দখল করে একতরফা সিল মেরে, আগে থেকে সিল মারা ব্যালট দিয়ে বাক্সবন্দি রাখা ইত্যাদির মাধ্যমে ফলাফল নিজেদের পক্ষে নেয়ার পরও জামায়াতে ইসলামীর এই ফলাফল সব হিসেবকে পাল্টে দিয়েছে। যারা মনে করেছিল যে য্দ্ধুাপরাধের বিচার,দমন-পীড়ন আর অপপ্রচার চালিয়ে জামায়াতকে কোণঠাসা করা সম্ভব হবে তাদের ধারণ ইতোপূর্বে ভুল প্রমাণিত হয়েছে এবং মানুষের মাঝে জামায়াতকে নিয়ে নতুন চিন্তার উদ্রেক হয়েছে।
এবার আসা যাক মূল প্রসংগ সিলেট সিটি নির্বাচন।১৮৬৭ সালে পৌরসভা গঠনের প্রায় ১৩৫ বছর পর ২০০২ সালে নগরীর মর্যাদা পায় সিলেট।২০০৯ সালে মহানগরীতে উন্নীত হলেও আয়তনে তেমন একটা বাড়েনি দেশের গুরুত্বর্পূণ এই মহানগরী।সিসিক সূত্র থেকে পাওয়া,তৎকালীন পৌরসভার সীমানা আয়তন ২৬.৫০ বর্গকিলোমিটার নিয়েই ২০০২ সালে সিলেট পৌরসভা সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হয়।সে অনুযায়ী উত্তর সুরমায় ২৪টি ওয়ার্ড এবং দক্ষিণ সুরমায় ৩টি ওয়ার্ড নিয়ে ২০০২ সাল থেকে চলছে সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রম।সিলেট সিটিতে প্রথম থেকেই কমিশনার ও সংরক্ষিত মহিলা কমিশনার প্রার্থী দিয়ে এসেছে জামায়াত এবং তারা কাঙ্খিত সফলতাও পেয়েছে।দীর্ঘ দুই যুগ জামায়াত শিবিরের নেতা-কর্মীরা শুধু অন্যের জন্যই খেটেছেন বটে।কিন্তু এবারই প্রথম মেয়র পদের জন্য প্রার্থী মনোনয়ন দেয় সংগঠনটি।স্বাভাবিক ভাবেই গোটা সিলেট বিভাগ এমনকি দেশ-বিদেশের সকল জনশক্তি সুধী শুভানুধ্যায়ীদের চোখ এখন সিলেট সিটির দিকে।গোটা সিলেট নগরীতে নির্বাচন উপলক্ষে দলটির নেতা-কর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।নির্বাচনী গণসংযোগে অংশ নিতে,নগরীতে অবস্থানরত আত্মীয়-স্বজনদের ভোট টানতে ঝাঁকে ঝাঁকে নগরীতে আসতে শুরু করেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা।এছাড়া বিভাগের সকল সাংগঠনিক জেলা,থানা থেকে "সাংগঠনিক টিম" পাড়া মহল্লা ভিত্তিক টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে "ডোর টু ডোর" "ম্যান টু ম্যান" প্ল্যান নিয়ে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে জামায়াত।মিডিয়ার চোখে মুখ থুবড়ে পরা কোমর ভেংগে যাওয়া সেই জামায়াত সিলেট থেকেই জানান দিতে যাচ্ছে "আমরা ফুরিয়ে যাইনি"
আর তাই যেসব কারণে মেয়র পদে জামায়াতের বিজয়ের সম্ভাবনা রয়েছে:-
এক...
নগরবাসীর মতে সিলেটের রাজনীতির মাঠে ক্লিন ইমেজের অধিকারী পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে এডভোকেট জুবায়েরের রয়েছে আলাদা ইমেজ ও গ্রহণযোগ্যতা।আদালত পাড়ায় তার রয়েছে সুনাম-সুখ্যাতি।ইসলামী ছাত্রশিবিরে এককালে সিলেট শহর শাখার সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় সভাপতি হওয়ার পাশাপাশি সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর হওয়ায় নগরীর প্রতিটি থানা,ওয়ার্ড,পাড়া-মহল্লায় রয়েছে তার বিচরণ। সিলেটে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রতিটি নীতিগত আন্দোলনে এবং সিলেটে দাবি-দাওয়া আদায়ের পাশাপাশি সামাজিক ও সুস্থ সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এডভোকেট জুবায়েরের রয়েছে অনেক সুনাম-সুখ্যাতি।শুধুমাত্র রাজনৈতিক মামলা ছাড়া তার বিরুদ্ধে আর কোন ধরনের অভিযোগও নেই। ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি থাকাকালীন শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস মুক্ত সুস্থ ছাত্র রাজনীতির পাশাপাশি শিক্ষাঙ্গনের কল্যাণে প্রচুর কাজ করেছেন এই জনপ্রিয় তরুণ নেতা।পাশাপাশি সিলেটে অন্যান্য যে কোন রাজনৈতিক দলের তুলনায় রয়েছে জামায়াত ও ছাত্র শিবিরের শক্ত সাংগঠনিক ভিত্তি।এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের মেয়র পদে মনোনয়ন দাখিলের পর থেকেই ফেইসবুক, টুইটার আর ব্লগে তাকে নিয়ে চলছে তুমল প্রচারণা।প্রতিপক্ষ প্রার্থীও ইতোমধ্যে তাকে নিয়ে ভাবনা শুরু করেছেন। ভার্চুয়াল জগতে দেশ-বিদেশে রীতিমতো ঝড় তুলেছেন জুবায়ের সমর্থকরা। সিলেট নগরীর তরুণ প্রজন্মও আগামী ৩০জুলাই নির্বাচনে পরিবর্তন দেখতে চায়।তাই সন্ত্রাস আর দুর্নীতির বিপরীতে পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ বিশিষ্ট আইনজীবী এডভোকেট জুবায়েরের বিজয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল।
দুই...
ধানের শীষ প্রতীকে যিনি প্রার্থী হয়েছেন সেই আরিফুল হককে বয়কট করেছেন দলের তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে সিলেটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।সদ্য বিদায়ী আরিফের দুর্নীতি,বিভিন্ন অনিয়ম দলের প্রতি উদাসীনতাসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে কেন্দ্রের কাছে তাকে মনোনয়ন না দেওয়ার দাবি তুলেছিলেন বদরুজ্জামান সেলিমসহ বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাওয়া সিলেট মহানগর সভাপতি নাসিম হোসাইন, সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকী, সহ-সভাপতি ও প্যানেল মেয়র রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও যুবদল কর্মী সালাহউদ্দিন রিমন।মহানগর সভাপতি নাছিম হোসাইন তার গুরুত্বপূর্ণ পদবী রক্ষার্থে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও অন্যরা আরিফের পক্ষে কাজ না করার ব্যাপারে আগেই কেন্দ্রকে অবহিত করেন।সিলেটের সদ্য বিদায়ী মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে চ্যালেঞ্জ দিয়েই এবার মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নেন নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম। তারা দু’জন ছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ থাকায় এবার সেলিম প্রার্থী হয়েছিলেন।সিলেট সিটি নির্বাচনে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে শুরুতেই মতানৈক্যে জড়িয়ে পড়ে ২০ দলীয় জোট। জোটের প্রধান ভূমিকায় থাকা বিএনপির মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয় আরিফুল হক চৌধুরীকে।পরে মনোনয়ন প্রত্যাশী সিলেট বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম কেন্দ্রীয় মনোনীত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীকে দলের মেয়র প্রার্থী হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং নিজে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দেন। পরে কেন্দ্রীয় বিএনপি তাকে বহিস্কার করে। সঙ্গত কারণেই বিএনপির দুই প্রার্থীর মধ্যে এখন দা-কুমড়া সম্পর্ক বিদ্যমান।অবশেষে অনেক নাটকীয়তার অবসান ঘটিয়ে নিজের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছেন বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিম।
শুনা যাচ্ছে,বিপুল পরিমাণ টাকার বিনিময়ে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছেন সেলিম।সেলিম প্রার্থীতা প্রত্যাহার করলেও তার অনুসারীর ভোট কিন্তু আরিফের বাক্সে পড়বেনা এটা দিবালোকের মত পরিষ্কার।সুতরাং ভোটের দিন সেলিমের পক্ষের মানুষ জুবায়েরের ঘড়ি মার্কায় ভোট দিবেন বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।তাই সব মিলিয়ে নির্বাচনে পরাজয়ের আশঙ্কা রয়েছেন বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী।
এছাড়াও আরিফের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক দলের জেলা আহ্বায়ক শামসুজ্জামান জামান। সিলেট বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ করতে বারবার কেন্দ্রীয় বিএনপি উদ্যোগ গ্রহণ করলেও কোনও লাভ হয়নি।যার কারণে সিটি নির্বাচনে বিএনপির কোন্দল প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে।
বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হকের জন্য নতুন ঝামেলা হয়েছে ছাত্রদলের বিরোধ।সদ্য গঠিত ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে বিরোধ মেটাতে বিদ্রোহীদের ঢাকায় ডেকে সান্তনা দিয়েছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারা।তাদের ধানের শীষের পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দিয়ে নির্বাচনের পর কমিটি পুনর্গঠনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।যদিও কেন্দ্রের এই উদ্যোগ ময়দানে খুব একটা পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হচ্ছেনা।দলের অভ্যন্তরে দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসা গ্রুপিংয়ের ফলে নানাভাগে বিভক্ত সিলেট বিএনপি। সিলেট বিএনপিতে গত দেড় যুগের বিরাজমান কলহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে চরম আকার ধারণ করেছে। নির্বাচনের ঠিক দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত হয়ে এমন অবর্ণনীয় বিবাদ বিএনপি মেয়র প্রার্থীর জন্য মারাত্মক হুমকি এতে করে জুবায়েরের পাল্লা ভারি হবে বলে সাধারণ মানুষের ধারনা।
এতে করে বিএনপির নিরব একটি অংশের ভোট জুবায়েরের পাল্লায় চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে আর তাতে বিজয়ের দৌড়ে ঘড়ি মার্কা এগিয়ে থাকছে।
তিন...
২০ দলীয় জোটের নামে বিএনপি কেবল তাদের এক দলের প্রার্থীদেরই মনোয়ন দিয়ে যাচ্ছে সারাদেশে। এজন্যে শরিকদলগুলো ক্ষুব্ধ বিএনপির উপর।এই সুযোগটিও কাজে লাগাতে পারছে সিলেটের জামায়াত। ইতোমধ্যে ২০ দলের মধ্য থেকে ১৭টি দলের সমর্থন ও সহযোগিতার আশ্বাস পেয়েছেন এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।তাই ঘড়ি মার্কার বিরামহীন গনসংযোগ ও পথসভায় উপস্থিত থাকেন লেবার পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সিলেট মহানগর সভাপতি মাহবুবুর রহমান খালেদ,ইসলামী ঐক্যজোটের সিলেট মহানগর সভাপতি মাওলানা জহুরুল হক, এলডিপির সিলেট জেলা সভাপতি সায়েদুর রহমান চৌধুরী রুপা, বিজেপি (আন্দালিব-পার্থ) সিলেট জেলা সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন লিটন, জাগপার কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট মহানগর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহজাহান আহমদ লিটন,এনডিপি সিলেট জেলা সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান। এছাড়া হেফাজতে ইসলাম সিলেট জেলার সমন্বয়কারী মাও. আসলাম রহমানও নির্বাচনী অফিস উদ্ভোধনের দিন হেফাজতের সমর্থনের কথা ব্যক্ত করেছেন।
সম্প্রতি, বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেল ৭১ এর একটি টকশোতে সিলেট এবং জামায়াতের মাঝে মূলত কি ঘটেছিলো তা নিয়ে মুখ খূলেন ২০ দলীয় জোটের এলডিপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম এবং খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের। টকশোর আলোচনার একটা পর্যায়ে তারা পরিষ্কার করেই বলেছেন,জামায়াত ২০১৩ সাল থেকে সিলেট সিটিতে মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী দেবে বলে জানিয়ে রেখেছিলো, কিন্তু সে ব্যাপারে বিএনপি জোটের বৈঠকে অনেকটা আলোচনা না করেই ঘোষণা দিয়েছে তাদের একক প্রার্থীর নাম। যা জামায়াত মেনে নিতে পারেনি। তারা আর বলেন, জামায়াত বিএনপিকে ঢাকা এবং গাজীপুরে প্রার্থী ঘোষণা করেও পরে শুধু মাত্র বিএনপি এবং জোটের কল্যাণে প্রার্থিতা তুলে নিয়েছিল এবং আশা করেছিল সিলেট সিটি নির্বাচনে তাদের পূর্ব চাহিদাকৃত প্রার্থীকে জোটের প্রার্থী হিসেবে মেনে নেয়া হবে।কিন্তু সে ব্যাপারে বিএনপি অনেকটা স্বেচ্ছাচারিটার পরিচয় দিয়েছে।তাই জোটের অন্য শরিকদের সমর্থন নৈতিক ভাবে জামায়াতের পক্ষে যাবে।
সিলেট তথা গোটা বাংলাদেশে পরিচিত আলেমে দ্বীন, সহীহ-শুদ্ধ ক্বোরআন তেলাওয়াত শিক্ষায় যার অবদান অনস্বীকার্য,শামসুল উলামা খ্যাত আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ছাহেব ক্বিবলাহ ফুলতলী (রহ.) প্রতিষ্ঠিত জামেয়া ইয়াক্বুবিয়া সুবহানীঘাট পরিদর্শন ও উলামায়ে কেরামের সাথে মতবিনিময়ে গিয়েছিলেন সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জামায়াত মেয়র পদপ্রার্থী এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের মতবিনিময় শেষে ছাহেবজাদায়ে ফুলতলী আল্লামা ক্বমর উদ্দিন উনাকে নিয়ে মোনাজাত করেন। এছাড়া কওমী আলিয়া মাদ্রাসার প্রখ্যাত উলামায়ে কেরামগণের নিকট গিয়ে এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের নিজে ঘড়ি মার্কায় দোআ এবং ভোট চাইলে সবাই প্রাণ খুলে জুবায়েরের জন্যে দোআ করেন এবং সমর্থন জানান।তাদের মধ্যে আধ্যাতিক নগরী সিলেটের সিংহ পুরুষ খ্যাত,বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবীবুর রহমান, ঐতিহাসিক শাহজালাল দরগা মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মুফতি আবুল কালাম যাকারিয়া, মাওলানা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ি, মাওলানা শফিকুল হক আমকুনী, মাওলানা মনসুরুল ইসলাম রায়পুরী সহ আরো অনেক প্রখ্যাত উলামা মাশায়েখ রয়েছেন যাদের ভক্তবৃন্দের সমর্থন যদি ঘড়ির দিকে চলে যায় তবে অবাক হওয়ার কিছু থাকবেনা।
চার...
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী কুমিল্লা বংশোদ্ভুত সিলেটের নাগরিক।সিলেটের রাজনীতিতে তাকে বহিরাগত মনে করা হয়।
সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের বিরুদ্ধে তার সময়ে নগরীর ড্রেনেজ সমস্যা, সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া, ফুটপাতকে ব্যবসা কেন্দ্রে পরিণত করা,এমসি কলেজ ছাত্রাবাস পোড়ানো নায়কদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে অভিযোগ রয়েছে। শতাধিক বছরের ঐতিহ্যবাহী সিলেট পৌরসভা সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তরিত হওয়ার পর দুইবারের নির্বাচিত মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান নগরীর কোন উন্নয়ন করেননি।সামান্য বৃষ্টি হলেই পানির নীচে ডুবে যায় গোটা নগরী।সে সময় রাস্তার লাইটগুলোও ঠিকমত লাগানো হতোনা।হকারদের নির্দিষ্ট জায়গা না দিয়ে গোটা নগরীকে বাজারে পরিণত করেছিলেন মেয়র কামরান। অব্যবস্থাপনার মধ্যে রাখা হয়েছিল নগরবাসীকে। কামরান সাহেব তিনি নগরবাসীর সেবা দেয়ার বদলে শুধু বিয়ের দাওয়াত খাওয়া ও ফিতা কাটাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন।বিরোধী দলের হরতাল-অবরোধের সময় তৎকালীন মেয়র কামরানের অতি উৎসাহী ভূমিকার প্রশ্ন তুলেছিলেন নগরবাসী।কামরান মেয়র থাকাকালীন ইসলামী ব্যাংকসহ সিলেটে বিভিন্ন ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে সরকারি দলের ক্যাডারদের হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট তার সময় মধুবন মার্কেটে মালিকদের ওপর নগরীর ভাসমান হকারদের হামলা এবং পুলিশের গুলী ছুঁড়াকে কেন্দ্র করে সাদা পাঞ্জাবী পরিহিত তৎসময়ের মেয়র কামরান এখন ইমেজ সংকটে রয়েছেন।এছাড়া শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজ ছাত্রাবাস পুড়ানোর চিহ্নিত সন্ত্রাসীদেরও প্রশ্রয় দিয়েছেন মেয়র কামরান এমন অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
আওয়ামীলীগ থেকেও কামরানের বিকল্প প্রার্থী হতে ইচ্ছুক রয়েছেন একাধিক ব্যক্তি তারা হলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ,আওয়ামী লীগ নেতা ফয়জুল আনোয়ার আলাওর, জাকির হোসেন ও আজাদুর রহমান আজাদ। তারাও চাইবেন নির্বাচনে কামরান সাহেবের ভরাডুবি।কারণ এবার কামরান পরাজিত হলে দলীয় হাইকমাণ্ডের নিকট বলতে পারবেন নিজেদের যোগ্যতার কথা।এছাড়া এক মন্ত্রী এবং সিলেটের আরেক কেন্দ্রীয় নেতার সাথে তার সম্পর্ক তেমন ভাল নয় বলে জানা যায়।সিলেটের কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ কেউ চান না কামরান মেয়র হোক।প্লাস পয়েন্ট হল আওয়ামী প্রার্থীর চরিত্র নিয়ে মাঠে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে।তিনি পান করেন এবং হোটেলে যান বলে ভোটারদের মাঝে আগে থেকেই বিকল্প প্রার্থীর দাবী উঠেছিল।কেন্দ্রীয় সংগঠন মাঠের দাবীকে গ্রাহ্য না করে কামরানকে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দিলে একটা গ্রুপ নাখোশ হয়।আওয়ামীলীগের কোন্দল সাধারনত বিএনপির মত প্রকাশ্যে আসে না,তারা আড়ালে থেকেই কাজ করে যান।সুতরাং সিলেট সিটির আওয়ামী ভোটও কয়েক ভাগে ভাগ হয়ে যেতে পারে।আগামীতে কামরানের পরিবর্তে প্রার্থী হতে আগ্রহীদের কয়েকটি গ্রুপ জামায়াতের প্রার্থীকে ভোট দিতেই পারে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা।
পাঁচ...
চলতি বছরের অক্টোবরের শেষদিন বা নভেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।সেই হিসেবে এই কমিশনের অধীনে সংসদ নির্বাচনের আগে বড় কোন স্থানীয় নির্বাচন হলো রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি নির্বাচন।খুলনা-গাজীপুরসহ সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে সরকার এবং ইসি নিরপেক্ষতার পরিচয় দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।জনগণ নিজ হাতে নিজের ভোট দিতে পারেনি। সরকার দলীয় নেতারা প্রকাশ্যে ভোট ডাকাতিতে অংশ নিয়ে সিল মেরেছে এবং এ সংক্রান্ত ছবি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে। ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে। শুধু দেশ নয় যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রই তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। এমতাবস্থায় সরকার ও ইসির বিশ্বাসযোগ্যতা শুন্যের কোটায় এসে নেমেছে। রাজনীতি গবেষকদের বিশ্লেষণ- সরকার বিগত নির্বাচন থেকে হয়তো শিক্ষা নিবে এবং আসন্ন সিলেট সহ অন্যান্য নির্বাচনে কিছুটা হলেও নির্লজ্জতার রাস্তা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করবে।কারণ এরপরেই সংসদ নির্বাচন সরকার শেষদিকে এসে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেখাতে চাইবে হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে যার প্রমাণ এই সিটি নির্বাচন।এবং সরল নিয়মে যেটা বুঝায় যেখানে বিএনপি-জামায়াত আলাদ সেখানে নৌকার বিজয়ের সম্ভাবনা একটু বেশী।এরকম একটা সমিকরণ থেকেও হয়তোবা সরকার সিলেট সিটিতেই তারা একটি গ্রহনযোগ্য নির্বাচন দেয়ার চেষ্টা করতে পারে।বিশ্লেষকদের এই ধারণা যদি আংশিক সত্যে পরিণত হয় তবে ‘পাবলিক সেন্টিমেন্ট’ কোন দিকে যাবে তা সচেতন মাত্রই উপলব্ধি করতে পারেন।এই পেক্ষাপটে সুবিধাজনক রেজাল্ট পেয়ে যেতে পারে জামায়াত।
ছয়...
সিলেট সিটি কর্পোরেশনে জামায়াতের ভোটসংখ্যা প্রকৃতপক্ষে কত তা জামায়াত নিজেরাও জানে না।অনেকেই মনে করেন জামায়াতের ভোট মানে কেবল তাদের দলীয় নেতা-কর্মীদেরই ভোট।এটা ঠিক একটি সুশৃঙ্খল দল হিসেবে তাদের দলীয় ভোট অন্যবাক্সে পড়ার কোন ঝুঁকি নেই।জামায়াতের ভোট অনেকটা নিরব ভোট। জামায়াতের বক্তব্য মতে সিলেট মহানগরে তাদের দলীয় ভোটার সমর্থক-সূধী মিলিয়ে পঁয়ত্রিশ হাজার প্লাস। তাদের এই বক্তব্যের সমর্থন পাওয়া যায় ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের পরিসংখ্যান থেকে।৯৬নির্বাচনে জামায়াত মাত্র ৩ টি আসনে বিজয় লাভ করে। এই জাতীয় বিপর্যয়ের মধ্যে সিলেট সদরে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হুমায়ন রশীদ চৌধুরী এবং বিএনপির প্রার্থী সাইফুর রহমানের সাথে প্রতিদ্বন্দিতা করেন জামায়াতের প্রার্থী ডা. শফিকুর রহমান।তিনি ২৬ হাজার ভোট পান। ৯৬’র পরে অতিক্রান্ত হয়েছে ২২ বছর। একদিনের জন্যও থেমে থাকেনি জামায়াতের সাংগঠনিক কার্যক্রম। ফলে জামায়াত যে বর্তমানে ৩৫ হাজার ভোট নিজেদের একান্ত দলীয় বলে দাবী করছে তা যুক্তিযুক্ত।নিজস্ব ভোটের পাশাপাশি জামায়াত ইতোমধ্যেই ২০ দলের মধ্যে ১৭ দলের সাথে মতবিনিময় করেছে।১৭ দলের নেতা-কর্মীরা বিগত সময়ের মেয়রদের কাছ থেকে তাদের ‘শুন্য’ প্রাপ্তির কথা বলেছেন এবং মেয়র প্রার্থী এডভোকেট জুবায়েরকে তাদের পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে।নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের ধারণা এসব দলের সম্মিলিত ভোট আনুমানকি ১৫-২০ হাজার হবে।এছাড়া নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে,২০ দলের বাহিরে আলেম-ওলামাদের একটি বিরাট অংশ জামায়াতের সাথে আছে বলে জানা যায়। তাদের সম্মিলিত ভোটের সংখ্যা আনুমানিক ১০ হাজারের মত।উল্লেখযোগ্য বিষয়,সিলেট বিভাগের যে সব জায়গায় বি এন পি জামায়াত আলাদা ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল এসকল অধিকাংশ জায়গায় জামায়াত প্রথম নয়তো ২য় হয়েছে।আর বিএনপি ৩য় না হয় চতুর্থ।বিগত সিটি নির্বাচনে জামায়াতের নির্বাচিত কাউন্সিলরের সংখ্যা চার জন।আরো দুইজনের বিজয় ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিল।এছাড়া সিলেট সদর উপজেলার বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জামায়াতের।এই দুই নির্বাচনী ফলাফল থেকে বুঝা যায় সদর তথা মহানগরীতে জামায়াতের অবস্থান কতটা সুসংহত।এবারের নির্বাচনে জামায়াতের ১৩ জন কমিশনার পদপ্রার্থী মাঠ চসে বেড়াচ্ছেন।নির্বাচনে- ‘চাচা আপন প্রাণ বাঁচা’ কথাটি খুব বাস্তব সত্য কথা হলেও কমিটেড জামায়াত বেলায় অসত্য।এসব কাউন্সিলর প্রার্থীদেরকে যারা ভালবাসেন এবং ভোট দিবেন তাদের একটা বড় অংশ মেয়র হিসেবে এডভোকেট জুবায়েরকে ভোট দিবেন বলে আশা করা যায়।এসব কিছুর বিবেচনায় এগিয়ে যেতে পারেন জামায়াত প্রার্থী এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।
সাত...
সিলেটের সাবেক দুই মেয়রই ইশতেহার বাস্তবায়ন করতে পারেন নাই।ইশতেহার বাস্তবায়ন না করা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করার শামিল। পরিবর্তনের সুর থেকে ২০১৩ সালের নির্বাচনে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মেয়র পদে বিজয়ী হওয়া আরিফুল হক চৌধুরীর অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিলো-"সিলেটকে সাইবার সিটিতে পরিণত করা"।"নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও জনবহুল স্থান ওয়াইফাইয়ের আওতায় নিয়ে আসার"প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আরিফ।তবে মেয়াদ শেষে ইশতেহারের এই আশ্বাস বাস্তবায়ন করতে পারেননি আরিফ।আরিফের আগে দুই মেয়াদে সিলেট সিটি কর্পোরেশন মেয়র ছিলেন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান।দুইবারই নির্বাচনী ইশতাহারেই তিনি সিলেট নগরীকে জলবদ্ধামুক্ত করার আশ্বাস দিয়েছিলেন।টানা প্রায় এগারো বছর মেয়রের দায়িত্ব পালন করলেও এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে পারেননি কামরান।এখনো বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে নগরীর অনেক এলাকা। সিলেট পৌরসভাকে ২০০২ সালে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করা হয়।এরপর দুই মেয়াদে কামরান ও এক মেয়াদে আরিফ মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আগের নির্বাচনগুলোর আগে দেওয়া তাদের নির্বাচনী ইশতেহার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দু’জনই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে পারেননি। আগামী ৩০ জুলাই ৩য় বারের মতো সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ও বিএনপি থেকে আরিফুল হক চৌধুরী প্রার্থী হয়েছেন।
আর প্রতারিত নয় এবার বদলে দাও বদলে দিন এই শ্লোগান যদি নতুন প্রজন্ম ৩০ তারিখ বাস্তবায়ন করে তাহলে ক্লিন ইমেজের অধিকারী পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ এডভোকেট জুবায়ের সুবিধাজনক রেজাল্ট পেয়ে যেতে পারেন।
আট...
বিগত নির্বাচনগুলোতে হালকা হুমকি-ধামকি দিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদেরকে ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।কিন্তু সিলেটে সেটা সম্ভব নয়।জামায়াত-শিবিরের সম্মিলিত প্রতিরোধে সন্ত্রাসীরা সুবিধা করতে পারবে না বলে মনে করেন অনেকে।তাদের ধারণা জামায়াতের লোকেরা কমিটেড তাদেরকে হুমকি দিয়ে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া সম্ভব নয়।তারা জীবন বাজি রেখে শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রে সুষ্ঠু পরিবেশ ধরে রাখতে তৎপর থাকবে। আর কেন্দ্র যদি নিরাপদ থাবে তবে সাধারণ মানুষ দলে দলে ভোট কেন্দ্রে আসবে এবং তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে।সন্ত্রাস নির্ভর কোন ব্যক্তি বা দল সুবিধা করতে পারবেনা।
বাংলদেশ জামায়াত ইসলামীর প্রার্থী এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের এর ব্যক্তিগত সাধারন জীবনাচরণ,শিক্ষা-দীক্ষা, জনসম্পৃক্ততা,রাজনৈতিক প্রজ্ঞা,সামাজিক পরিচয়, সাংগঠনিক পরিচয় এবং সিলেট জামায়াতের শক্তিশালী ভিত্তি ইত্যাদির কারণে এবারের মেয়র নির্বাচন কিছুটা ভিন্ন ধাচের হবে।সরকার যদি খুলনা-গাজীপুরের মত পুনরাবৃত্তি না করে তবে অসম্ভব নয় জামায়াতের বিজয়।
iqbalahmedchowdhury@gmail.com
সিটি টিভি নিউ, 20/07/2018
ইকবাল আহমদ চৌধুরী
এবার সিলেট সিটি নির্বাচনী ইস্যুতে সব থেকে আলোচিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।দেশের ৩য় বৃহৎ ও ২০দলীয় জোটের ২য় প্রধান এ রাজনৈতিক দল এবারই প্রথম খুব গুরুত্বের সাথে কোনো সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী দিয়েছে তাও আবার সিলেটে।
জামায়াত ২০দলীয় জোটের দ্বিতীয় বৃহৎ দল যারা জোট সম্পৃক্ত সকল আন্দোলনেই অগ্রভাগে নেতৃত্ব দেয় ও আন্দোলন পরিচালনা করে থাকে।
সে সুবাদে তারা এবার এগারোটি সিটি নির্বাচনে জোট প্রধান দল বিএনপি কে ছাড় ও সমর্থন দিয়ে পক্ষে কাজ করে একটি সিটিতে প্রার্থী দিতে যায়।কিন্তু বিএনপি তা নাকচ করে বরাবরের মতোই তাদের দলীয় প্রার্থীকে জোটের প্রার্থী হিসাবে সমর্থন নিতে চাইলে জামায়াতও তা প্রত্যাখ্যান করে এবং তাদের নির্বাচনী অবস্থান আরো শক্ত করে বিজয়ী হওয়ার চেষ্টায় কোমর বেঁধে নেমেছে।
২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালে সংসদে যেনতেনভাবে আইন সংশোধন করে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করা হয়। তখন থেকে চলছে ঢালাও প্রচারণা। ক্ষমতাসীনদের বক্তব্য বিবৃতি নানা রকম গালাগালের পাশাপাশি সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া কোন বিচার বিবেচনা ছাড়াই একতরফা প্রচারণায় মেতে উঠে।তাদের প্রচারণায় একরকম জামায়াতকে জঙ্গি ও যুদ্ধাপরাধী দলই সাব্যস্ত করা হয়।গঠিত হয় ট্রাইব্যুনাল সেখানে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড দেয়া হয় এবং তা কার্যকর করা হয়। আবার কোন কোন রায়ে নাক বাড়িয়ে জামায়াতকে ক্রিমিনাল অর্গানাইজেশন বলতেও কসুর করেনি।আর প্রশাসনযন্ত্র জামায়াত ও তার ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবিরের উপর চালিয়ে দেয় ইতিহাসের বর্বর নারকীয় তান্ডবের ষ্ট্রীমরোলার।
এমন দমন নীতি যা বাংলাদেশর ইতিহাসে আর ঘটেনি।মিছিল,মিটিংসহ সব ধরনের গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে তাদেরকে।দলের কেন্দ্রীয় অফিস,মহানগরী অফিসসহ এমনকি জেলা-উপজেলার অফিসগুলো পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়।রাস্তায় দেখামাত্র গুলীর নির্দেশ ছিল একমাত্র জামায়াত-শিবিরের জন্যই প্রযোজ্য।সরকারের দমন-পীড়নের শিকার হয়ে কয়েক শত নেতা-কর্মীকে এই আট বছরে জীবন দিতে হয়েছে, আহত হয়েছে হাজার হাজার নেতা-কর্মী যাদের অনেককেই বরণ করতে হয়েছে স্থায়ী পঙ্গুত্ব।লক্ষাধিক নেতা-কর্মীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে, হাজার হাজার মামলা ঝুলছে এই দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে।
বিগত আট বছর ধরে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের সর্বগ্রাসী একতরফা প্রচারণা এবং প্রশাসনযন্ত্র ব্যবহার করে জামায়াতকে প্রায় অবরুদ্ধ করে রাখা হলেও পরিস্থিতি এখন অনেকটাই পাল্টে গেছে।সিলেট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চায়ের দোকান, বাস-ট্রেন স্টেশনেও এখন নির্বিঘ্নে চলছে জামায়াত নিয়ে আলোচনা।কিছু নাস্তিক বাম ঘরনার সংবাদপত্র আর ইলেকট্রনিক মিডিয়ার একতরফা প্রচারণা যে,গোটা জাতির বক্তব্য নয়,যা ছিল সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর বিকৃত মানসিকতার প্রতিফলন তা সাধারণ জনগণ ঠিকই টের পেয়েছে ফলে তাদের অপপ্রচারের ফল হয়েছে উল্টো তার প্রমাণ গত
উপজেলা,পৌরসভা,ইউনিয়ন এবং বিভিন্ন সিটি কমিশনার নির্বাচনে জামায়াত প্রার্থীদের পক্ষে অভাবনীয় সাফল্য।উদাহরণস্বরূপ বলা যায় গত পাঁচ দফা উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ১৯৬টিতে বিজয়ী হয়েছে যার মধ্যে জামায়াতের ৩৬জন। সরকারদলীয়রা দখলী শক্তি ব্যবহার করে ২২৫টি চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছে।অপরদিকে পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২০দলীয় জোট প্রার্থীরা ২২৬টি উপজেলায় বিজয়ী হয়েছেন।এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর ১২০ জন এবং বিএনপি’র ১০৬ জন।সরকারদলীয়দের দখলে গেছে ১৫৩টি উপজেলার পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সরকারদলীয় ১৫৫ জন এবং ২০দলীয় জোটের প্রার্থীরা ১৭৮টি নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে জামায়াতের ৩৪ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রয়েছেন।
সবচেয়ে আলোচিত দুইটি ঘটনা হলো জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর সাবেক মন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর নিজ উপজেলা পাবনার সাঁথিয়া এবং দলের নায়েবে আমীর আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মোফাসসিরে কুরআন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর উপজেলা জিয়ানগর উপজেলার ফলাফল।পাবনার সাঁথিয়ায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সবগুলোতেই জামায়াতের প্রার্থীরা বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। মাওলানা নিজামী যদি যুদ্ধাপরাধী হতেন বা জামায়াত যদি যুদ্ধাপরাধী দল হতো তাহলে এভাবে জামায়াতকে মানুষ ভোট দিয়ে বিজয়ী করতো না। পিরোজপুরের জিয়ানগর উপজেলায় মাওলানা সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী আওয়ামী লীগ প্রার্থীর তুলনায় প্রায় চার গুণ ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এই জিয়ানগর উপজেলা হলো সংখ্যালঘু হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা।
বিশেষ করে তিনটি কেন্দ্র ছিল প্রায় ৯০ ভাগ হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা।সেখানেও সাঈদীর ছেলে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কয়েকগুণ ভোট বেশি পেয়ে।যদি আল্লামা সাঈদী সত্যিই যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত হতেন, হিন্দুদের ওপর যদি তিনি অত্যাচার করতেন তাহলে হিন্দুরা তার ছেলেকে এভাবে বিপুল ভোটে বিজয়ী করতো না।এথেকে নিঃসন্দেহে বলা যায় অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে ফলাফল হতো আরো তাৎপর্যপূর্ণ।চর দখলের কায়দায় কেন্দ্র দখল করে একতরফা সিল মেরে, আগে থেকে সিল মারা ব্যালট দিয়ে বাক্সবন্দি রাখা ইত্যাদির মাধ্যমে ফলাফল নিজেদের পক্ষে নেয়ার পরও জামায়াতে ইসলামীর এই ফলাফল সব হিসেবকে পাল্টে দিয়েছে। যারা মনে করেছিল যে য্দ্ধুাপরাধের বিচার,দমন-পীড়ন আর অপপ্রচার চালিয়ে জামায়াতকে কোণঠাসা করা সম্ভব হবে তাদের ধারণ ইতোপূর্বে ভুল প্রমাণিত হয়েছে এবং মানুষের মাঝে জামায়াতকে নিয়ে নতুন চিন্তার উদ্রেক হয়েছে।
এবার আসা যাক মূল প্রসংগ সিলেট সিটি নির্বাচন।১৮৬৭ সালে পৌরসভা গঠনের প্রায় ১৩৫ বছর পর ২০০২ সালে নগরীর মর্যাদা পায় সিলেট।২০০৯ সালে মহানগরীতে উন্নীত হলেও আয়তনে তেমন একটা বাড়েনি দেশের গুরুত্বর্পূণ এই মহানগরী।সিসিক সূত্র থেকে পাওয়া,তৎকালীন পৌরসভার সীমানা আয়তন ২৬.৫০ বর্গকিলোমিটার নিয়েই ২০০২ সালে সিলেট পৌরসভা সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হয়।সে অনুযায়ী উত্তর সুরমায় ২৪টি ওয়ার্ড এবং দক্ষিণ সুরমায় ৩টি ওয়ার্ড নিয়ে ২০০২ সাল থেকে চলছে সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রম।সিলেট সিটিতে প্রথম থেকেই কমিশনার ও সংরক্ষিত মহিলা কমিশনার প্রার্থী দিয়ে এসেছে জামায়াত এবং তারা কাঙ্খিত সফলতাও পেয়েছে।দীর্ঘ দুই যুগ জামায়াত শিবিরের নেতা-কর্মীরা শুধু অন্যের জন্যই খেটেছেন বটে।কিন্তু এবারই প্রথম মেয়র পদের জন্য প্রার্থী মনোনয়ন দেয় সংগঠনটি।স্বাভাবিক ভাবেই গোটা সিলেট বিভাগ এমনকি দেশ-বিদেশের সকল জনশক্তি সুধী শুভানুধ্যায়ীদের চোখ এখন সিলেট সিটির দিকে।গোটা সিলেট নগরীতে নির্বাচন উপলক্ষে দলটির নেতা-কর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।নির্বাচনী গণসংযোগে অংশ নিতে,নগরীতে অবস্থানরত আত্মীয়-স্বজনদের ভোট টানতে ঝাঁকে ঝাঁকে নগরীতে আসতে শুরু করেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা।এছাড়া বিভাগের সকল সাংগঠনিক জেলা,থানা থেকে "সাংগঠনিক টিম" পাড়া মহল্লা ভিত্তিক টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে "ডোর টু ডোর" "ম্যান টু ম্যান" প্ল্যান নিয়ে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে জামায়াত।মিডিয়ার চোখে মুখ থুবড়ে পরা কোমর ভেংগে যাওয়া সেই জামায়াত সিলেট থেকেই জানান দিতে যাচ্ছে "আমরা ফুরিয়ে যাইনি"
আর তাই যেসব কারণে মেয়র পদে জামায়াতের বিজয়ের সম্ভাবনা রয়েছে:-
এক...
নগরবাসীর মতে সিলেটের রাজনীতির মাঠে ক্লিন ইমেজের অধিকারী পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে এডভোকেট জুবায়েরের রয়েছে আলাদা ইমেজ ও গ্রহণযোগ্যতা।আদালত পাড়ায় তার রয়েছে সুনাম-সুখ্যাতি।ইসলামী ছাত্রশিবিরে এককালে সিলেট শহর শাখার সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় সভাপতি হওয়ার পাশাপাশি সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর হওয়ায় নগরীর প্রতিটি থানা,ওয়ার্ড,পাড়া-মহল্লায় রয়েছে তার বিচরণ। সিলেটে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রতিটি নীতিগত আন্দোলনে এবং সিলেটে দাবি-দাওয়া আদায়ের পাশাপাশি সামাজিক ও সুস্থ সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এডভোকেট জুবায়েরের রয়েছে অনেক সুনাম-সুখ্যাতি।শুধুমাত্র রাজনৈতিক মামলা ছাড়া তার বিরুদ্ধে আর কোন ধরনের অভিযোগও নেই। ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি থাকাকালীন শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস মুক্ত সুস্থ ছাত্র রাজনীতির পাশাপাশি শিক্ষাঙ্গনের কল্যাণে প্রচুর কাজ করেছেন এই জনপ্রিয় তরুণ নেতা।পাশাপাশি সিলেটে অন্যান্য যে কোন রাজনৈতিক দলের তুলনায় রয়েছে জামায়াত ও ছাত্র শিবিরের শক্ত সাংগঠনিক ভিত্তি।এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের মেয়র পদে মনোনয়ন দাখিলের পর থেকেই ফেইসবুক, টুইটার আর ব্লগে তাকে নিয়ে চলছে তুমল প্রচারণা।প্রতিপক্ষ প্রার্থীও ইতোমধ্যে তাকে নিয়ে ভাবনা শুরু করেছেন। ভার্চুয়াল জগতে দেশ-বিদেশে রীতিমতো ঝড় তুলেছেন জুবায়ের সমর্থকরা। সিলেট নগরীর তরুণ প্রজন্মও আগামী ৩০জুলাই নির্বাচনে পরিবর্তন দেখতে চায়।তাই সন্ত্রাস আর দুর্নীতির বিপরীতে পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ বিশিষ্ট আইনজীবী এডভোকেট জুবায়েরের বিজয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল।
দুই...
ধানের শীষ প্রতীকে যিনি প্রার্থী হয়েছেন সেই আরিফুল হককে বয়কট করেছেন দলের তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে সিলেটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।সদ্য বিদায়ী আরিফের দুর্নীতি,বিভিন্ন অনিয়ম দলের প্রতি উদাসীনতাসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে কেন্দ্রের কাছে তাকে মনোনয়ন না দেওয়ার দাবি তুলেছিলেন বদরুজ্জামান সেলিমসহ বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাওয়া সিলেট মহানগর সভাপতি নাসিম হোসাইন, সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকী, সহ-সভাপতি ও প্যানেল মেয়র রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও যুবদল কর্মী সালাহউদ্দিন রিমন।মহানগর সভাপতি নাছিম হোসাইন তার গুরুত্বপূর্ণ পদবী রক্ষার্থে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও অন্যরা আরিফের পক্ষে কাজ না করার ব্যাপারে আগেই কেন্দ্রকে অবহিত করেন।সিলেটের সদ্য বিদায়ী মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে চ্যালেঞ্জ দিয়েই এবার মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নেন নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম। তারা দু’জন ছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ থাকায় এবার সেলিম প্রার্থী হয়েছিলেন।সিলেট সিটি নির্বাচনে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে শুরুতেই মতানৈক্যে জড়িয়ে পড়ে ২০ দলীয় জোট। জোটের প্রধান ভূমিকায় থাকা বিএনপির মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয় আরিফুল হক চৌধুরীকে।পরে মনোনয়ন প্রত্যাশী সিলেট বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম কেন্দ্রীয় মনোনীত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীকে দলের মেয়র প্রার্থী হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং নিজে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দেন। পরে কেন্দ্রীয় বিএনপি তাকে বহিস্কার করে। সঙ্গত কারণেই বিএনপির দুই প্রার্থীর মধ্যে এখন দা-কুমড়া সম্পর্ক বিদ্যমান।অবশেষে অনেক নাটকীয়তার অবসান ঘটিয়ে নিজের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছেন বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিম।
শুনা যাচ্ছে,বিপুল পরিমাণ টাকার বিনিময়ে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছেন সেলিম।সেলিম প্রার্থীতা প্রত্যাহার করলেও তার অনুসারীর ভোট কিন্তু আরিফের বাক্সে পড়বেনা এটা দিবালোকের মত পরিষ্কার।সুতরাং ভোটের দিন সেলিমের পক্ষের মানুষ জুবায়েরের ঘড়ি মার্কায় ভোট দিবেন বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।তাই সব মিলিয়ে নির্বাচনে পরাজয়ের আশঙ্কা রয়েছেন বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী।
এছাড়াও আরিফের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক দলের জেলা আহ্বায়ক শামসুজ্জামান জামান। সিলেট বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ করতে বারবার কেন্দ্রীয় বিএনপি উদ্যোগ গ্রহণ করলেও কোনও লাভ হয়নি।যার কারণে সিটি নির্বাচনে বিএনপির কোন্দল প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে।
বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হকের জন্য নতুন ঝামেলা হয়েছে ছাত্রদলের বিরোধ।সদ্য গঠিত ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে বিরোধ মেটাতে বিদ্রোহীদের ঢাকায় ডেকে সান্তনা দিয়েছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারা।তাদের ধানের শীষের পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দিয়ে নির্বাচনের পর কমিটি পুনর্গঠনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।যদিও কেন্দ্রের এই উদ্যোগ ময়দানে খুব একটা পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হচ্ছেনা।দলের অভ্যন্তরে দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসা গ্রুপিংয়ের ফলে নানাভাগে বিভক্ত সিলেট বিএনপি। সিলেট বিএনপিতে গত দেড় যুগের বিরাজমান কলহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে চরম আকার ধারণ করেছে। নির্বাচনের ঠিক দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত হয়ে এমন অবর্ণনীয় বিবাদ বিএনপি মেয়র প্রার্থীর জন্য মারাত্মক হুমকি এতে করে জুবায়েরের পাল্লা ভারি হবে বলে সাধারণ মানুষের ধারনা।
এতে করে বিএনপির নিরব একটি অংশের ভোট জুবায়েরের পাল্লায় চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে আর তাতে বিজয়ের দৌড়ে ঘড়ি মার্কা এগিয়ে থাকছে।
তিন...
২০ দলীয় জোটের নামে বিএনপি কেবল তাদের এক দলের প্রার্থীদেরই মনোয়ন দিয়ে যাচ্ছে সারাদেশে। এজন্যে শরিকদলগুলো ক্ষুব্ধ বিএনপির উপর।এই সুযোগটিও কাজে লাগাতে পারছে সিলেটের জামায়াত। ইতোমধ্যে ২০ দলের মধ্য থেকে ১৭টি দলের সমর্থন ও সহযোগিতার আশ্বাস পেয়েছেন এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।তাই ঘড়ি মার্কার বিরামহীন গনসংযোগ ও পথসভায় উপস্থিত থাকেন লেবার পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সিলেট মহানগর সভাপতি মাহবুবুর রহমান খালেদ,ইসলামী ঐক্যজোটের সিলেট মহানগর সভাপতি মাওলানা জহুরুল হক, এলডিপির সিলেট জেলা সভাপতি সায়েদুর রহমান চৌধুরী রুপা, বিজেপি (আন্দালিব-পার্থ) সিলেট জেলা সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন লিটন, জাগপার কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট মহানগর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহজাহান আহমদ লিটন,এনডিপি সিলেট জেলা সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান। এছাড়া হেফাজতে ইসলাম সিলেট জেলার সমন্বয়কারী মাও. আসলাম রহমানও নির্বাচনী অফিস উদ্ভোধনের দিন হেফাজতের সমর্থনের কথা ব্যক্ত করেছেন।
সম্প্রতি, বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেল ৭১ এর একটি টকশোতে সিলেট এবং জামায়াতের মাঝে মূলত কি ঘটেছিলো তা নিয়ে মুখ খূলেন ২০ দলীয় জোটের এলডিপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম এবং খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের। টকশোর আলোচনার একটা পর্যায়ে তারা পরিষ্কার করেই বলেছেন,জামায়াত ২০১৩ সাল থেকে সিলেট সিটিতে মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী দেবে বলে জানিয়ে রেখেছিলো, কিন্তু সে ব্যাপারে বিএনপি জোটের বৈঠকে অনেকটা আলোচনা না করেই ঘোষণা দিয়েছে তাদের একক প্রার্থীর নাম। যা জামায়াত মেনে নিতে পারেনি। তারা আর বলেন, জামায়াত বিএনপিকে ঢাকা এবং গাজীপুরে প্রার্থী ঘোষণা করেও পরে শুধু মাত্র বিএনপি এবং জোটের কল্যাণে প্রার্থিতা তুলে নিয়েছিল এবং আশা করেছিল সিলেট সিটি নির্বাচনে তাদের পূর্ব চাহিদাকৃত প্রার্থীকে জোটের প্রার্থী হিসেবে মেনে নেয়া হবে।কিন্তু সে ব্যাপারে বিএনপি অনেকটা স্বেচ্ছাচারিটার পরিচয় দিয়েছে।তাই জোটের অন্য শরিকদের সমর্থন নৈতিক ভাবে জামায়াতের পক্ষে যাবে।
সিলেট তথা গোটা বাংলাদেশে পরিচিত আলেমে দ্বীন, সহীহ-শুদ্ধ ক্বোরআন তেলাওয়াত শিক্ষায় যার অবদান অনস্বীকার্য,শামসুল উলামা খ্যাত আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ছাহেব ক্বিবলাহ ফুলতলী (রহ.) প্রতিষ্ঠিত জামেয়া ইয়াক্বুবিয়া সুবহানীঘাট পরিদর্শন ও উলামায়ে কেরামের সাথে মতবিনিময়ে গিয়েছিলেন সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জামায়াত মেয়র পদপ্রার্থী এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের মতবিনিময় শেষে ছাহেবজাদায়ে ফুলতলী আল্লামা ক্বমর উদ্দিন উনাকে নিয়ে মোনাজাত করেন। এছাড়া কওমী আলিয়া মাদ্রাসার প্রখ্যাত উলামায়ে কেরামগণের নিকট গিয়ে এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের নিজে ঘড়ি মার্কায় দোআ এবং ভোট চাইলে সবাই প্রাণ খুলে জুবায়েরের জন্যে দোআ করেন এবং সমর্থন জানান।তাদের মধ্যে আধ্যাতিক নগরী সিলেটের সিংহ পুরুষ খ্যাত,বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবীবুর রহমান, ঐতিহাসিক শাহজালাল দরগা মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মুফতি আবুল কালাম যাকারিয়া, মাওলানা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ি, মাওলানা শফিকুল হক আমকুনী, মাওলানা মনসুরুল ইসলাম রায়পুরী সহ আরো অনেক প্রখ্যাত উলামা মাশায়েখ রয়েছেন যাদের ভক্তবৃন্দের সমর্থন যদি ঘড়ির দিকে চলে যায় তবে অবাক হওয়ার কিছু থাকবেনা।
চার...
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী কুমিল্লা বংশোদ্ভুত সিলেটের নাগরিক।সিলেটের রাজনীতিতে তাকে বহিরাগত মনে করা হয়।
সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের বিরুদ্ধে তার সময়ে নগরীর ড্রেনেজ সমস্যা, সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া, ফুটপাতকে ব্যবসা কেন্দ্রে পরিণত করা,এমসি কলেজ ছাত্রাবাস পোড়ানো নায়কদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে অভিযোগ রয়েছে। শতাধিক বছরের ঐতিহ্যবাহী সিলেট পৌরসভা সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তরিত হওয়ার পর দুইবারের নির্বাচিত মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান নগরীর কোন উন্নয়ন করেননি।সামান্য বৃষ্টি হলেই পানির নীচে ডুবে যায় গোটা নগরী।সে সময় রাস্তার লাইটগুলোও ঠিকমত লাগানো হতোনা।হকারদের নির্দিষ্ট জায়গা না দিয়ে গোটা নগরীকে বাজারে পরিণত করেছিলেন মেয়র কামরান। অব্যবস্থাপনার মধ্যে রাখা হয়েছিল নগরবাসীকে। কামরান সাহেব তিনি নগরবাসীর সেবা দেয়ার বদলে শুধু বিয়ের দাওয়াত খাওয়া ও ফিতা কাটাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন।বিরোধী দলের হরতাল-অবরোধের সময় তৎকালীন মেয়র কামরানের অতি উৎসাহী ভূমিকার প্রশ্ন তুলেছিলেন নগরবাসী।কামরান মেয়র থাকাকালীন ইসলামী ব্যাংকসহ সিলেটে বিভিন্ন ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে সরকারি দলের ক্যাডারদের হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট তার সময় মধুবন মার্কেটে মালিকদের ওপর নগরীর ভাসমান হকারদের হামলা এবং পুলিশের গুলী ছুঁড়াকে কেন্দ্র করে সাদা পাঞ্জাবী পরিহিত তৎসময়ের মেয়র কামরান এখন ইমেজ সংকটে রয়েছেন।এছাড়া শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজ ছাত্রাবাস পুড়ানোর চিহ্নিত সন্ত্রাসীদেরও প্রশ্রয় দিয়েছেন মেয়র কামরান এমন অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
আওয়ামীলীগ থেকেও কামরানের বিকল্প প্রার্থী হতে ইচ্ছুক রয়েছেন একাধিক ব্যক্তি তারা হলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ,আওয়ামী লীগ নেতা ফয়জুল আনোয়ার আলাওর, জাকির হোসেন ও আজাদুর রহমান আজাদ। তারাও চাইবেন নির্বাচনে কামরান সাহেবের ভরাডুবি।কারণ এবার কামরান পরাজিত হলে দলীয় হাইকমাণ্ডের নিকট বলতে পারবেন নিজেদের যোগ্যতার কথা।এছাড়া এক মন্ত্রী এবং সিলেটের আরেক কেন্দ্রীয় নেতার সাথে তার সম্পর্ক তেমন ভাল নয় বলে জানা যায়।সিলেটের কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ কেউ চান না কামরান মেয়র হোক।প্লাস পয়েন্ট হল আওয়ামী প্রার্থীর চরিত্র নিয়ে মাঠে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে।তিনি পান করেন এবং হোটেলে যান বলে ভোটারদের মাঝে আগে থেকেই বিকল্প প্রার্থীর দাবী উঠেছিল।কেন্দ্রীয় সংগঠন মাঠের দাবীকে গ্রাহ্য না করে কামরানকে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দিলে একটা গ্রুপ নাখোশ হয়।আওয়ামীলীগের কোন্দল সাধারনত বিএনপির মত প্রকাশ্যে আসে না,তারা আড়ালে থেকেই কাজ করে যান।সুতরাং সিলেট সিটির আওয়ামী ভোটও কয়েক ভাগে ভাগ হয়ে যেতে পারে।আগামীতে কামরানের পরিবর্তে প্রার্থী হতে আগ্রহীদের কয়েকটি গ্রুপ জামায়াতের প্রার্থীকে ভোট দিতেই পারে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা।
পাঁচ...
চলতি বছরের অক্টোবরের শেষদিন বা নভেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।সেই হিসেবে এই কমিশনের অধীনে সংসদ নির্বাচনের আগে বড় কোন স্থানীয় নির্বাচন হলো রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি নির্বাচন।খুলনা-গাজীপুরসহ সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে সরকার এবং ইসি নিরপেক্ষতার পরিচয় দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।জনগণ নিজ হাতে নিজের ভোট দিতে পারেনি। সরকার দলীয় নেতারা প্রকাশ্যে ভোট ডাকাতিতে অংশ নিয়ে সিল মেরেছে এবং এ সংক্রান্ত ছবি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে। ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে। শুধু দেশ নয় যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রই তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। এমতাবস্থায় সরকার ও ইসির বিশ্বাসযোগ্যতা শুন্যের কোটায় এসে নেমেছে। রাজনীতি গবেষকদের বিশ্লেষণ- সরকার বিগত নির্বাচন থেকে হয়তো শিক্ষা নিবে এবং আসন্ন সিলেট সহ অন্যান্য নির্বাচনে কিছুটা হলেও নির্লজ্জতার রাস্তা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করবে।কারণ এরপরেই সংসদ নির্বাচন সরকার শেষদিকে এসে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেখাতে চাইবে হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে যার প্রমাণ এই সিটি নির্বাচন।এবং সরল নিয়মে যেটা বুঝায় যেখানে বিএনপি-জামায়াত আলাদ সেখানে নৌকার বিজয়ের সম্ভাবনা একটু বেশী।এরকম একটা সমিকরণ থেকেও হয়তোবা সরকার সিলেট সিটিতেই তারা একটি গ্রহনযোগ্য নির্বাচন দেয়ার চেষ্টা করতে পারে।বিশ্লেষকদের এই ধারণা যদি আংশিক সত্যে পরিণত হয় তবে ‘পাবলিক সেন্টিমেন্ট’ কোন দিকে যাবে তা সচেতন মাত্রই উপলব্ধি করতে পারেন।এই পেক্ষাপটে সুবিধাজনক রেজাল্ট পেয়ে যেতে পারে জামায়াত।
ছয়...
সিলেট সিটি কর্পোরেশনে জামায়াতের ভোটসংখ্যা প্রকৃতপক্ষে কত তা জামায়াত নিজেরাও জানে না।অনেকেই মনে করেন জামায়াতের ভোট মানে কেবল তাদের দলীয় নেতা-কর্মীদেরই ভোট।এটা ঠিক একটি সুশৃঙ্খল দল হিসেবে তাদের দলীয় ভোট অন্যবাক্সে পড়ার কোন ঝুঁকি নেই।জামায়াতের ভোট অনেকটা নিরব ভোট। জামায়াতের বক্তব্য মতে সিলেট মহানগরে তাদের দলীয় ভোটার সমর্থক-সূধী মিলিয়ে পঁয়ত্রিশ হাজার প্লাস। তাদের এই বক্তব্যের সমর্থন পাওয়া যায় ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের পরিসংখ্যান থেকে।৯৬নির্বাচনে জামায়াত মাত্র ৩ টি আসনে বিজয় লাভ করে। এই জাতীয় বিপর্যয়ের মধ্যে সিলেট সদরে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হুমায়ন রশীদ চৌধুরী এবং বিএনপির প্রার্থী সাইফুর রহমানের সাথে প্রতিদ্বন্দিতা করেন জামায়াতের প্রার্থী ডা. শফিকুর রহমান।তিনি ২৬ হাজার ভোট পান। ৯৬’র পরে অতিক্রান্ত হয়েছে ২২ বছর। একদিনের জন্যও থেমে থাকেনি জামায়াতের সাংগঠনিক কার্যক্রম। ফলে জামায়াত যে বর্তমানে ৩৫ হাজার ভোট নিজেদের একান্ত দলীয় বলে দাবী করছে তা যুক্তিযুক্ত।নিজস্ব ভোটের পাশাপাশি জামায়াত ইতোমধ্যেই ২০ দলের মধ্যে ১৭ দলের সাথে মতবিনিময় করেছে।১৭ দলের নেতা-কর্মীরা বিগত সময়ের মেয়রদের কাছ থেকে তাদের ‘শুন্য’ প্রাপ্তির কথা বলেছেন এবং মেয়র প্রার্থী এডভোকেট জুবায়েরকে তাদের পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে।নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের ধারণা এসব দলের সম্মিলিত ভোট আনুমানকি ১৫-২০ হাজার হবে।এছাড়া নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে,২০ দলের বাহিরে আলেম-ওলামাদের একটি বিরাট অংশ জামায়াতের সাথে আছে বলে জানা যায়। তাদের সম্মিলিত ভোটের সংখ্যা আনুমানিক ১০ হাজারের মত।উল্লেখযোগ্য বিষয়,সিলেট বিভাগের যে সব জায়গায় বি এন পি জামায়াত আলাদা ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল এসকল অধিকাংশ জায়গায় জামায়াত প্রথম নয়তো ২য় হয়েছে।আর বিএনপি ৩য় না হয় চতুর্থ।বিগত সিটি নির্বাচনে জামায়াতের নির্বাচিত কাউন্সিলরের সংখ্যা চার জন।আরো দুইজনের বিজয় ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিল।এছাড়া সিলেট সদর উপজেলার বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জামায়াতের।এই দুই নির্বাচনী ফলাফল থেকে বুঝা যায় সদর তথা মহানগরীতে জামায়াতের অবস্থান কতটা সুসংহত।এবারের নির্বাচনে জামায়াতের ১৩ জন কমিশনার পদপ্রার্থী মাঠ চসে বেড়াচ্ছেন।নির্বাচনে- ‘চাচা আপন প্রাণ বাঁচা’ কথাটি খুব বাস্তব সত্য কথা হলেও কমিটেড জামায়াত বেলায় অসত্য।এসব কাউন্সিলর প্রার্থীদেরকে যারা ভালবাসেন এবং ভোট দিবেন তাদের একটা বড় অংশ মেয়র হিসেবে এডভোকেট জুবায়েরকে ভোট দিবেন বলে আশা করা যায়।এসব কিছুর বিবেচনায় এগিয়ে যেতে পারেন জামায়াত প্রার্থী এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।
সাত...
সিলেটের সাবেক দুই মেয়রই ইশতেহার বাস্তবায়ন করতে পারেন নাই।ইশতেহার বাস্তবায়ন না করা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করার শামিল। পরিবর্তনের সুর থেকে ২০১৩ সালের নির্বাচনে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মেয়র পদে বিজয়ী হওয়া আরিফুল হক চৌধুরীর অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিলো-"সিলেটকে সাইবার সিটিতে পরিণত করা"।"নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও জনবহুল স্থান ওয়াইফাইয়ের আওতায় নিয়ে আসার"প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আরিফ।তবে মেয়াদ শেষে ইশতেহারের এই আশ্বাস বাস্তবায়ন করতে পারেননি আরিফ।আরিফের আগে দুই মেয়াদে সিলেট সিটি কর্পোরেশন মেয়র ছিলেন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান।দুইবারই নির্বাচনী ইশতাহারেই তিনি সিলেট নগরীকে জলবদ্ধামুক্ত করার আশ্বাস দিয়েছিলেন।টানা প্রায় এগারো বছর মেয়রের দায়িত্ব পালন করলেও এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে পারেননি কামরান।এখনো বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে নগরীর অনেক এলাকা। সিলেট পৌরসভাকে ২০০২ সালে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করা হয়।এরপর দুই মেয়াদে কামরান ও এক মেয়াদে আরিফ মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আগের নির্বাচনগুলোর আগে দেওয়া তাদের নির্বাচনী ইশতেহার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দু’জনই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে পারেননি। আগামী ৩০ জুলাই ৩য় বারের মতো সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ও বিএনপি থেকে আরিফুল হক চৌধুরী প্রার্থী হয়েছেন।
আর প্রতারিত নয় এবার বদলে দাও বদলে দিন এই শ্লোগান যদি নতুন প্রজন্ম ৩০ তারিখ বাস্তবায়ন করে তাহলে ক্লিন ইমেজের অধিকারী পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ এডভোকেট জুবায়ের সুবিধাজনক রেজাল্ট পেয়ে যেতে পারেন।
আট...
বিগত নির্বাচনগুলোতে হালকা হুমকি-ধামকি দিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদেরকে ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।কিন্তু সিলেটে সেটা সম্ভব নয়।জামায়াত-শিবিরের সম্মিলিত প্রতিরোধে সন্ত্রাসীরা সুবিধা করতে পারবে না বলে মনে করেন অনেকে।তাদের ধারণা জামায়াতের লোকেরা কমিটেড তাদেরকে হুমকি দিয়ে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া সম্ভব নয়।তারা জীবন বাজি রেখে শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রে সুষ্ঠু পরিবেশ ধরে রাখতে তৎপর থাকবে। আর কেন্দ্র যদি নিরাপদ থাবে তবে সাধারণ মানুষ দলে দলে ভোট কেন্দ্রে আসবে এবং তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে।সন্ত্রাস নির্ভর কোন ব্যক্তি বা দল সুবিধা করতে পারবেনা।
বাংলদেশ জামায়াত ইসলামীর প্রার্থী এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের এর ব্যক্তিগত সাধারন জীবনাচরণ,শিক্ষা-দীক্ষা, জনসম্পৃক্ততা,রাজনৈতিক প্রজ্ঞা,সামাজিক পরিচয়, সাংগঠনিক পরিচয় এবং সিলেট জামায়াতের শক্তিশালী ভিত্তি ইত্যাদির কারণে এবারের মেয়র নির্বাচন কিছুটা ভিন্ন ধাচের হবে।সরকার যদি খুলনা-গাজীপুরের মত পুনরাবৃত্তি না করে তবে অসম্ভব নয় জামায়াতের বিজয়।
iqbalahmedchowdhury@gmail.com
কোন মন্তব্য নেই