সাধারণত শবে বরাতকে মুসলমানদের একটি পর্ব বা খুশির দিন বলে মনে করা হয়।

শবে বরাত
আল ইমাম ও উস্তাদ আল্লামা মওদুদী (রঃ)।
(ইসলাম প্রিয় ঈমানদারদের লেখাটি পড়া অত্যন্ত জরুরী)

City Tv News,09.05.2017

মোঃ তাজুল ইসলাম।
সাধারণত শবে বরাতকে মুসলমানদের একটি পর্ব বা খুশির দিন বলে মনে করা হয়। এর জন্য কিছু রসম রেওয়াজও গড়ে তোলা হয়েছে। এগুলো বেশ কড়াকড়ির সাথে পালন করা হয়। ধুমধাম ও জাকজমকের বিচারেতো যেন মোহররমের পরপরই এর স্থান। কিন্তু সত্য কথা হলো, এটা অযথা একটি মনগড়া পর্ব। না কুরআন মজীদে এর কোনো ভিত্তি আছে না হাদীস শরীফে। না সাহাবায়ে কেরামেট যুগের ইতিহাসে এর কোনো নাম নিশানা পাওয়া যায়। আর না প্রাথমিক কালের বুযুর্গানে দ্বীনের কেউ এটাকে ইসলামের পর্ব বলেছেন।
প্রকৃতপক্ষে ইসলাম রসম রেওয়াজ ও পালা পার্বণের দ্বীন নয়। ইসলামতো একটি সাদাসিধা ও যুক্তিসঙ্গত দ্বীন। এ দ্বীন মানুষকে রসম রেওয়াজের বেড়াজাল থেকে, খেল তামাশার অর্থহীন কাজকর্মে মশগুল হওয়া থেকে বাজে কাজ সময়, শ্রম ও সম্পদ অপচয় থেকে রক্ষা করে জীবনকে বাস্তব সত্যের দিকে আকৃষ্ট করে এবং দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা ও কল্যাণের কাজে মানুষকে ব্যস্ত রাখে। এমন একটা দ্বীনে প্রকৃতির সাথে এরূপ কাজের কোনো সামঞ্জস্য নেই যে, সে বছরে একদিন হালুয়া রুটি পাকানো ও আতসবাজি করার জন্য নির্দিষ্ট করে দেবে আর মানুষকে বলবে যে, তুমি বিশেষভাবে প্রতি বছর নিজের জীবনের কিছু মূল্যবান সময় ও নিজের কষ্টার্জিত ধনের বেশ কিছু অংশ বরবাদ করতে থাকো। এর চেয়েও দূরতম কথা হলো এই যে, ইসলাম এমন কোনো রসম রেওয়াজ পালন করতে অভ্যস্ত করবে, যা শুধু সময় ও টাকা পয়সাই বরবাদ করে না, বরং কোনো কোনো সময় জীবননাশের ঘটনাও ঘটে এবং ঘরবাড়ী পর্যন্ত এই শিখা গিয়ে পৌছে। এ ধরনের বাজে কাজের নির্দেশ দেয়াতো দূরের কথা, যদি এমন ধরনের কোনো রেওয়াজ নবী করীম (সঃ) এর যামানায় বিদ্যমান থাকতো, তাহলে নিশ্চয়ই আইন প্রয়োগ করে তা বন্ধ করে দেয়া হতো। আর এ ধরনের যেসব রেওয়াজ সে সময় প্রচলিত ছিলো তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
হালুয়া ও আঁতশবাজীর ব্যাপারটাতো এতো পরিষ্কার যে, যে ব্যক্তি ইসলাম সম্পর্কে সামান্য কিছুও জানে সেও প্রথম দৃষ্টিতেই বলে দেবে যে, এসব কাজ করা এ দ্বীনের স্পিরিটের খেলাপ। কিন্তু আমরা যখন তালাশ করি যে, সাবান মাসের এ বিশেষ দিনের সাথে কোনো নির্ভরযোগ্য ধর্মীয় আকীদা সংশ্লিষ্ট আছে কিনা অথবা কোনো আবশ্যকীয় ইবাদাত নির্ধারিত আছে কিনা,তখন এর কোনো নাম নিশানাও পাওয়া যায় না। ইসলামী সাহিত্যে যদি বেশী কিছু পাওয়া যায় তা শুধু এই যে, একবার শাবান মাসের ১৫ তারিখ রাত্রে হযরত আয়েশা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সঃ) কে বিছানায় না পেয়ে তালাশ করতে বেরিয়ে পড়লেন। তালাশ করতে করতে তিনি 'জান্নাতুল বাকী' কবরস্থানে গিয়ে তাঁকে পেলেন। এখানে আসার কারণ জিঙ্গেস করলে তিনি বললেন, এ রাতে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার আসমানের দিকে দৃষ্টি দান করেন এবং কালব গোত্রের ভেড়াগুলোর দেহে যে পরিমাণ লোম আছে তত সংখ্যক মানুষের গুনাহ মাফ করে দেন। কিন্তু হাদীসের বিখ্যাত ইমাম তিরমিযী (রাহঃ) এ বর্ণনাটিকে "যয়িফ" বলেছেন এবং নিজের অনুসন্ধান সম্পর্কে বলেছেন, এ হাদীসের সনদ সঠিকভাবে হযরত আয়েশা (রাঃ) পর্যন্ত পৌছে না। অন্য কতিপয় হাদীসে যা কিছু কম মর্যাদাসম্পন্ন হাদীস গ্রন্থে পাওয়া যায়, তাতে এ রাতের ফযিলত সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এতে ভাগ্যের ফয়সালা করা হয়, জন্ম ও মৃর্ত্যুর বিষয় চুড়ান্ত করা হয়। কিন্তু এ হাদীসই দূর্বল। প্রতিটি হাদীসের সনদেই কোনো কোনো দূর্বলতা বিদ্যমান। এজন্য হাদীসের প্রাচীনতর ও অধিক নির্ভরযোগ্য কিতাবের কোথাও এ হাদীসের উল্লেখ পাওয়া যায় না। তারপরও যদি এর কোনো ভিত্তি স্বীকার করে নেয়া হয় তাহলে শুধু এতটুকুই সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে যে, এ রাতে ইবাদাত করা ও আল্লাহর নিকট মাগফিরাত কামনা করা একটি উত্তম কাজ যা ব্যক্তিগতভাবপ করলেও সওয়াব পাওয়া যাবে। এসবই রিওয়ায়াত হতে এর বেশী কিছু প্রমাণিত হয় না, যার ভিত্তিতে মনে করা যেতে পারে যে, ১৪ তারিখে বা ১৫ তারিখের রাতকে ইসলামে ঈদ সাব্যস্ত করা হয়েছে অথবা কোনো সামাজিক ইবাদাত হিসাবে নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
হাদীসের অধিক নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহ হতে যে কথা প্রমাণিত তা এই যে, রমযান মাস আসার আগেই শাবান মাসে রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর উপর এক ধরনের অবস্থা সৃষ্টি হতো। রমযান হলো সেই মাস, যে মাসে আল্লাহ তায়ালা মহানবী (সঃ) কে নবুওয়তের মতো মহামান্বিত পদে অধিষ্ঠিত করেছেন এবং কুরআনের মতো চিরস্থায়ী কিতাব নাযিল শুরু হয়েছে। এ কারণে শুধু রমযান মাসেই তিনি অসাধারণ ইবাদাত বন্দেগীতে মশগুল হতেন না বরং এর আগে থেকেই তাঁর ধ্যান আল্লাহর সাথে লেগে যেতো। হযরত আয়েশা (রাঃ) ও হযরত উম্মে সালামা (রাঃ) বরণনা করেছেন, রমযান ছাড়া বছরের বাকী এগারো মাসের মধ্যে শুধু শাবান মাসই এমন, যে মাসে তিনি সবচেয়ে বেশী রোযা রাখতেন। প্রায় গোটা মাসই তিনি রোযা অবস্থায় কাটাতেন। কিন্তু এ আমল শুধু তাঁর নিজের জন্য নির্দিষ্ট ছিলো। আল্লাহর সাথে তাঁর গভীর রূহানী সম্পর্কের কারণেই তা সম্ভব ছিলো। করআন নাযিল হওয়ার মাস থেকেই তাঁর এ

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.