শবে বরাত কি জেনে নিন
শবেবরাত
আরবী শা‘বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে উপমহাদেশে ‘শবেবরাত’ বলা হয়। যা ‘সৌভাগ্য রজনী’ হিসাবে পালিত হয়।
ধর্মীয় ভিত্তি :
সিটি টিভি নিউজ, ০৭/০৫/২০১৭ ইংরাজি
মোটামুটি ৩টি ধর্মীয় আক্বীদাই এর ভিত্তি হিসাবে কাজ করে থাকে। ১ এ রাতে কুরআন নাযিল হয় এবং এ রাতে আগামী এক বছরের জন্য বান্দার ভালমন্দ তাক্বদীর নির্ধারিত হয়। (২) এ রাতে বান্দার গোনাহ সমূহ মাফ করা হয়। (৩) এ রাতে রূহগুলি সব ছাড়া পেয়ে মর্ত্যে নেমে আসে। ফলে মোমবাতি, আগরবাতি, পটকা ও আতশবাযী হয়তোবা রূহগুলিকে সাদর অভ্যর্থনা জানাবার জন্য করা হয়।
শবেবরাতে হালুয়া রুটি খাওয়া সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে যে, এ দিন আল্লাহর নবী (ছাঃ)এর দান্দান মুবারক ওহোদের যুদ্ধে শহীদ হয়েছিল। ব্যথার জন্য তিনি নরম খাদ্য হিসাবে হালুয়া রুটি খেয়েছিলেন বিধায় আমাদেরও সেই ব্যথায় সমব্যথী হয়ে হালুয়া রুটি খেতে হয়। অথচ ওহোদের যুদ্ধ হয়েছিল ৩য় হিজরীর শাওয়াল মাসের ৭ তারিখ শনিবার সকাল বেলা।1 আর আমরা ব্যথা অনুভব করছি তার প্রায় দু’মাস পূর্বে শা‘বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত্রে
এক্ষণে আমরা উপরোক্ত বিষয়গুলির ধর্মীয় ভিত্তি কতটুকু তা খুঁজে দেখব। প্রথমটির সপক্ষে যে সব আয়াত ও হাদীছ পেশ করা হয় তা নিম্নরূপ :
(১) এ রাতে কুরআন নাযিল হয় এবং এ রাতে আগামী এক বছরের জন্য বান্দার ভালমন্দ তাক্বদীর নির্ধারিত হয়।
(ক) প্রথমটির দলীল হিসাবে সূরা দুখান এর ৩ ও ৪ আয়াত পেশ করা হয়ে থাকে। যেখানে আল্লাহ বলেন,إِنَّا اَنْزَلْنَاهُ فِى لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِيْنَ- فِيْهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍحَكِيْمٍ- ‘আমরা এটি নাযিল করেছি এক বরকতময় রাত্রিতে,আমরা তো সতর্ককারী। এ রাত্রিতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়’ (দুখান ৪৪ ৩ ৪)।
হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) স্বীয় তাফসীরে বলেন এখানে বরকতময় রাত্রি’ অর্থ ‘ক্বদরের রাত্রি’। যেমন আল্লাহ বলেন,إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِىْ لَيْلَةٍ الْقَدْرِ ‘নিশ্চয়ই আমরা এটি নাযিল করেছি ক্বদরের রাত্রিতে (ক্বদর ৯৭,১। আর সেটি হ’ল রামাযান মাসে। যেমন আল্লাহ বলেন, شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِىْ أُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْآنُ، ‘এই সেই রামাযান মাস যার মধ্যে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে বাক্বারাহ ২,১৮৫। এক্ষণে ঐ রাত্রিকে মধ্য শা‘বান বা শবেবরাত বলে ইকরিমা প্রমুখ হ তে যে কথা বলা হয়েছে, তা সঙ্গত কারণেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই রাতে এক শা বান হ তে আরেক শা বান পর্যন্ত বান্দার ভাগ্য লিপিবদ্ধ হয়। এমনকি তার বিবাহ, সন্তানাদী ও মৃত্যু নির্ধারিত হয় বলে যে হাদীছ 2 প্রচারিত আছে, তা মুরসাল ও যঈফ এবং কুরআন ও ছহীহ হাদীছ সমূহের বিরোধী হওয়ার কারণে অগ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন, ক্বদরের রাতেই লওহে মাহফূযে সংরক্ষিত ভাগ্যলিপি হ’তে পৃথক করে আগামী এক বছরের নির্দেশাবলী তথা মৃত্যু, রিযিক ও অন্যান্য ঘটনাবলী যা সংঘটিত হবে, সেগুলি লেখক ফেরেশতাগণের নিকটে প্রদান করা হয়। এভাবেই বর্ণিত হয়েছে হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর, মুজাহিদ, আবু মালিক, যাহ্হাক প্রমুখ সালাফে ছালেহীনের নিকট হ তে ঐ, তাফসীর সূরা দুখান ৩ ৪ আয়াত।
(খ) অতঃপর ‘তাক্বদীর’ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য হ’ল- وَكُلُّ شَىْءٍ فَعَلُوْهُ فِى الزُّبُرِ- وَكُلُّ صَغِيْرٍ وكَبِيْرٍ مُسْتَطَرٌ ‘তাদের সমস্ত কার্যকলাপ রক্ষিত আছে আমলনামায়’। ‘আছে ছোট ও বড় সবকিছুই লিপিবদ্ধ’ (ক্বামার ৫৪/৫২ ৫৩)এর ব্যাখ্যা হাদীছে এসেছে যে, ‘আসমান সমূহ ও যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাযার বৎসর পূর্বেই আল্লাহ স্বীয় মাখলূক্বাতের তাক্বদীর লিপিবদ্ধ করেছেন।3 এক্ষণে ‘শবেবরাতে প্রতিবছর ভাগ্য নির্ধারিত হয়’ বলে যে ধারণা প্রচলিত আছে, তার কোন ছহীহ ভিত্তি নেই।
(২) এ রাতে বান্দার গোনাহসমূহ মাফ করা হয়
সেজন্য দিনে ছিয়াম পালন ও রাতে ইবাদত করতে হয়। এ সম্পর্কে প্রধান যে তিনটি দলীল দেওয়া হয়ে থাকে, তা নিম্নরূপ :
(ক) হযরত আলী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,إِذَا كَانَتْ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَقُومُوا لَيْلَهَا وَصُومُوا نَهَارَهَا ‘মধ্য শা‘বান এলে তোমরা রাত্রিতে ইবাদত কর ও দিবসে ছিয়াম পালন কর’ (ইবনু মাজাহ হা/১৩৮৮)। হাদীছটি মওযূ‘ বা জাল (যঈফাহ হা/২১৩২)। এর সনদে ‘ইবনু আবী সাব্রাহ’ নামে একজন রাবী আছেন, যিনি হাদীছ জালকারী। দ্বিতীয়তঃ হাদীছটি ছহীহ হাদীছের বিরোধী হওয়ায় অগ্রহণযোগ্য। কেননা একই মর্মে প্রসিদ্ধ ‘হাদীছে নুযূল’ যা ইবনু মাজাহর ৯৮ পৃষ্ঠায় মা আয়েশা (রাঃ) হ’তে (হা/১৩৬৬) এবং বুখারী শরীফের (মীরাট ছাপা ১৩২৮ হি.) ১৫৩, ৯৩৬ ও ১১১৬ পৃষ্ঠায় যথাক্রমে হাদীছ সংখ্যা ১১৪৫, ৬৩২১ ও ৭৪৯৪ এবং ‘কুতুবে সিত্তাহ’ সহ অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে সর্বমোট ৩০ জন ছাহাবী কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে।4 সেখানে ‘মধ্য শা‘বানের রাত্রি’ না বলে ‘প্রতি রাত্রির শেষ তৃতীয়াংশ’ বলা হয়েছে। অতএব ছহীহ হাদীছ সমূহের বর্ণনানুযায়ী আল্লাহপাক প্রতি রাত্রির তৃতীয় প্রহরে নিম্ন আকাশে অবতরণ করে বান্দাকে ফজরের সম
কোন মন্তব্য নেই