কোম্পানীগঞ্জে ভুয়া সাংবাদিকদের ছড়াছড়ি : 'কথিত' মুর্শেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পত্র দিলেন ইউএনও

কোম্পানীগঞ্জে ভুয়া সাংবাদিকদের ছড়াছড়ি : 'কথিত' মুর্শেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পত্র দিলেন ইউএনও

বিশেষ প্রতিবেদক : কোম্পানীগঞ্জে ‘কথিত’ সাংবাদিকদের অপসাংবাদিকতায় স্থানীয় প্রশাসন ও সুশীল সমাজসহ মূল ধারার সংবাদকর্মীরা বিব্রত।  ‘ক’ লিখতে কলম ভাঙেন এমন ব্যক্তিরাও এখন বিভিন্ন অখ্যাত পত্রিকার পরিচয়পত্র এনে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিচ্ছে।  এসব সাংবাদিক পরিচয়ধারীদের মধ্যে অনেকের এসএসসি পরীক্ষা পাসের সনদ নেই।  রাতারাতি সাংবাদিক বনে গিয়ে তারা নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে।

তাদের একজন ‘কথিত’ শেখ মুর্শেদ।  বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোগলাবাজার থানার করাতকল গ্রামে।  সে নিজেকে ‘বড় সাংবাদিক’ পরিচয় দিয়ে কোম্পানীগঞ্জের পাড়ুয়া গ্রামে গড়ে তুলে অস্থায়ী ঠিকানা।  পাড়ুয়ায় থেকে দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে।  সাংবাদিক পরিচয়ের পাশাপাশি সে নিজেকে ‘শেখ পরিবারের একজন’ দাবি করে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। সে নিজেকে ‘মুক্তিযুদ্ধের স্ব-পক্ষের শক্তি’ দাবি করে বিভিন্ন মহলের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে বলেও স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।

কোম্পানীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ আবুল হোসেন জানান, কোম্পানীগঞ্জে হলুদ সাংবাদিকদের কারণে দিন দিন মূল ধারার সাংবাদিকরা কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।  মেধাবী ও শিক্ষিত ছেলেদের সাংবাদিকতা পেশায় আসতে দেখা যাচ্ছে না।  তিনি বলেন, সাংবাদিক সেজে বহিরাগত শেখ মুর্শেদ নানা অপকর্ম চালিয় যাচ্ছে।  সে কোম্পানীগঞ্জ প্রেসক্লাবের কোনো সদস্য নয়।  সে বিভিন্ন সময় মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুর্শেদের কারণে স্থানীয় প্রশাসন ও সুস্থ ধারার সাংবাদিকরা প্রায় সময় বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন।  সে কোম্পানীগঞ্জের সহজ-সরল ছেলেদের নিয়ে ‘সাংবাদিক ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন করেছে।  ওই সংগঠনের সভাপতি সে নিজেই।  তাকে রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতে আমন্ত্রণ না জানালে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অখ্যাত বিভিন্ন পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে অপপ্রচার শুরু করে।  স্থানীয় প্রশাসন আয়োজিত কোনো অনুষ্ঠানেও দাওয়াত না পেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশন করে।  এতে বিভ্রান্তি সৃষ্টিসহ জনমনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক হয়।

সম্প্রতি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তাকে বক্তব্যের সুযোগ না দেওয়ায় ইউএনও মুহাম্মদ আবুল লাইছ ও স্থানীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং বিভিন্ন অখ্যাত অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করে।  এতেই থেমে থাকেনি, কিছু লোকদের ভুল বুঝিয়ে ইউএনও’র বিরুদ্ধে রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) পাড়ুয়া গ্রামে একটি সমাবেশ করায় সে।  সেই সমাবেশে তার কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার জন্য ইউএনওকে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটায় দেয় মুর্শেদ।

এদিকে, গত ৮ সেপ্টেম্বর একটি পত্রে মুর্শেদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসিকে নির্দেশ প্রদান করেছেন ইউএনও মুহাম্মদ আবুল লাইছ।  পত্রে তিনি উল্লেখ করেন, জনৈক শেখ মুর্শেদ ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন, জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ এবং ব্যক্তিগতভাবে মানহানি করার উদ্দেশ্যে তার নিজস্ব ফেইসবুক আইডি থেকে “ব্রাহ্মণবাদের ফেরিওয়ালা কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও” শিরোনামে একটি বক্তব্য প্রচার করে।  যে বক্তব্য ইলেক্ট্রনিক ফরমে মিথ্যা এবং মানহানিকর তথ্য প্রকাশ সংক্রান্ত অপরাধ।

পত্রে আরো উল্লেখ করা হয়, গত ২২ আগস্ট কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপ-মহা পুলিশ পরিদর্শকের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত ‘ওপেন হাউজ ডে’ সভায় শেখ মুর্শেদ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলাধীন পাথর কোয়ারি সমূহে পরিবেশ বিধ্বংসী বোমা মেশিন ব্যবহারের পক্ষে বক্তব্য রাখে।  সে অবৈধভাবে ব্যবহৃত বোমা মেশিন চক্রের সাথে জড়িত এবং মেশিন মালিকদের নিকট হতে সাংবাদিকদের নাম ভাঙিয়ে অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করছে।

যোগাযোগ করা হলে ইউএনও মুহাম্মদ আবুল লাইছ জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ব্যক্তিনির্ভর কিছু ওয়েব পোর্টালে মিথ্যা তথ্য ও মানহানিকর বক্তব্য প্রচারের কারণে শেখ মুর্শেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ওসি কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আলতাফ হোসেন জানান, শেখ মুর্শেদের বিরুদ্ধে ইউএনও স্যারের দেয়া পত্রটি ঢাকায় সাইবার ক্রাইম ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।  সেখান থেকে অনুমোদন হয়ে আসলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.