সিটি টিভি নিউজ: ১৮/১০/২০১৭
লেখক: আজিজুল হক মানিক-ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক দৈনিক জালালাবাদ।
সিলেটের খ্যাতিমান ভাষা সৈনিক, সাহিত্যিক, গ্রন্থাগার আন্দোলনের পথিকৃৎ, সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও আজীবন সম্পাদক মুহম্মদ নুরুল হকের ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।
একজন নিরলস সাহিত্য ও সমাজসেবক
মুহম্মদ নুরুল হক ১৯০৭ সালের ১৯ মার্চ সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দশঘর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা হাজী মুহম্মদ আয়াজ এবং মাতা রহিমা খাতুন। শৈশবে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষে তিনি রায়কেলী এম.ই. স্কুল, ফুলবাড়ি জাতীয় মাদ্রাসা এবং সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসায় অধ্যয়ন করেন। ছাত্রাবস্থায়ই তিনি নিজ গ্রামে একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেন, যা তার সাহিত্য ও জ্ঞানচর্চার প্রতি গভীর অনুরাগের প্রকাশ।
সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় অগ্রণী ভূমিকা
মুহম্মদ নুরুল হক আজীবন সাহিত্যচর্চা ও গ্রন্থাগার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি হাতে লেখা পত্রিকা ‘অভিযান’ প্রকাশের মাধ্যমে সাহিত্যজগতে প্রবেশ করেন। ১৯৩১ সালে সেই পত্রিকাটি ‘মাসিক আল-ইসলাহ্’ নামে মুদ্রিত আকারে আত্মপ্রকাশ করে, যা বাংলা ও আসাম অঞ্চলের সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। তিনি প্রায় পাঁচ দশক ধরে এ পত্রিকার প্রকাশনা ও সম্পাদনা চালিয়ে যান।
সিলেটের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে অবদান
সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদকে তিনি একটি সমৃদ্ধ পাঠাগারে রূপান্তরিত করেন। ১৯৬১ সালে ঐতিহাসিক নজরুল সাহিত্য সম্মেলনের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি। একই বছর রবীন্দ্র শতবার্ষিকী অনুষ্ঠানের সাহিত্য বিভাগের দায়িত্বও পালন করেন।
ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
১৯৪৭ সালে মুহম্মদ নুরুল হক বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানান এবং ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। এছাড়া, ১৯৪৬-৪৭ সালে আসাম সেন্ট্রাল বুক কমিটির সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
তার সাহিত্য ও সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি তমঘা-ই-খেদমত উপাধি লাভ করেন, যা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি বর্জন করেন। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, বাংলা একাডেমি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান তাকে সম্মাননা প্রদান করে। তিনি মরহুম আমীনুর রশিদ চৌধুরী স্মৃতি স্বর্ণপদকেও ভূষিত হন।
প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ
তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে—
📖 বিশ্বনেতা
📖 ফারুক চরিত্রের বৈশিষ্ট্য
📖 সংবাদপত্র সেবায় সিলেটের মুসলমান
📖 বিগত যুগের আদর্শ
📖 আলোক স্তম্ভ
📖 হারানো দিনের স্মৃতি
শেষ বিদায়
১৯৮৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর তিনি সিলেট শহরের ঝরনার পারস্থ নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন, আমিন।