সেপ্টেম্বর ভাষা সৈনিক মুহাম্মদ নুরুল হকের ৩০তম মৃত্যু বার্ষিকী
সেপ্টেম্বর ভাষা সৈনিক মুহাম্মদ
নুরুল হকের ৩০তম মৃত্যু বার্ষিকী
সিটি টিভি নিউজ, ১৮/১০/২০১৭
লেখক"
আজিজুল হক মানিক,
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক দৈনিক জালালাবাদ।
গ্রন্থাগার আন্দোলনের পথিকৃৎ, ভাষা সৈনিক, সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও আজীবন সম্পাদক, মাসিক আল-ইসলাহ্’র প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক মুহম্মদ নুরুল হক-এর ৩০তম মৃত্যু বার্ষিকী।
মুহম্মদ নুরুল হক ১৯০৭ সালের ১৯ মার্চ সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলার দশঘর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা-হাজী মুহম্মদ আয়াজ, মাতা-রহিমা খাতুন।
শৈশবে গ্রামের প্রাইমারী স্কুল, কৈশোরে রায়কেলী এম.ই. স্কুল, ফুলবাড়ি জাতীয় মাদ্রাসা, বেলাব অঞ্চলের আমলাব সিনিয়র মাদ্রাসা ও পরে সিলেট সরকারী আলিয়া মাদ্রাসায় শেষ পরীক্ষায় অর্থাৎ ফাইনাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
এম.ই. স্কুলে পাঠকালীন সময়ে স্বগ্রামে একটি পাঠাগার স্থাপন করেন।
তখন থেকেই লেখালেখির জগতে প্রবেশ।
মুহম্মদ নুরুল হক অর্ধশতাব্দিকাল নিজ মেধা, শ্রম ও একাগ্রতা নিয়ে ঐতিহ্যবাহী সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদকে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগারে রূপ দিয়ে যান।
বহু প্রতিকূল প্রতিবেশ ও অবস্থার সাথে নিরব লড়াই করে সাহিত্য সংসদকে তিনি দেশের একটি উল্লেখযোগ্য মানের প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলেন।
সাহিত্য সাধনার নিরলস কর্মী মুহম্মদ নুরুল হক প্রথমে “অভিযান” নামে একটি হাতে লেখা পত্রিকা বের করেন।
১৯৩১ সালে এই পত্রিকাই “মাসিক আল-ইসলাহ্” নামে আত্মপ্রকাশ করে মুদ্রিত আকারে বের হয়। এই পত্রিকার মাধ্যমে তিনি বাংলা ও আসাম অঞ্চলের সাহিত্য চর্চায় যুগান্তকারী অবদান রাখেন।
তিনি প্রায় অর্ধশতাব্দিরও অধিক কাল আল ইসলাহ্ প্রকাশ ও সম্পাদনা করেন।
মুহম্মদ নুরুল হককে সাহিত্য ও সমাজসেবায় স্বীকৃতি স্বরূপ জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, বাংলা একাডেমীসহ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন পদক সম্মানে ভূষিত করেন। তিনি মরহুম আমীনুর রশিদ চৌধুরী স্মৃতি স্বর্ণপদকও লাভ করেন।
“মুহম্মদ নুরুল হক জীবন ও সাধনা”Ñশীর্ষক পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন এমসি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সাহেদা আক্তার। তার গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন বিশিষ্ট রোকেয়া গবেষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. শামছুল আলম।
দীর্ঘ ৫ বছরের গবেষণা কর্ম শেষে ২০১০ সালের ২৪ মে তিনি নিয়মমাফিক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে থিসিস দাখিল করেন। ২০১১ সালের ৬ এপ্রিল ৪৭২তম সিন্ডিকেট সাহেদা আক্তারকে “ডক্টর অব ফিলোসফি” উপাধি প্রদান করে।
১৯৫০ সালের ২৬ মার্চ মাওলানা সিদ্দেক
আলীর কন্যা মোছাম্মৎ নুরুন্নেছা খাতুনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের মজলিসে অধুনালুপ্ত “আনসার” পত্রিকার সম্পাদক মাওলানা সাখাওয়াতুল আম্বিয়া এবং “নওবেলাল” পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদ আলী উপস্থিত ছিলেন। তিনি ১৯৪৭ খ্রীষ্টাব্দে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা করার দাবী জানান এবং বিভিন্ন উদ্যোগ নেন। পরবর্তীতে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।
১৯৪৬-৪৭ খ্রীষ্টাব্দে আসাম সেন্ট্রাল বুক কমিটির সদস্য নিযুক্ত হন। ১৯৬১ খ্রীষ্টাব্দে সিলেটে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক নজরুল সাহিত্য সম্মেলনের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন। একই বছর রবীন্দ্র শতবার্ষিকী অনুষ্ঠানের সাহিত্য বিভাগের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৬৩ খ্রীষ্টাব্দে তৎকালীন পাকিস্তানে ১৭তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সমাজসেবা স্বীকৃতি স্বরূপ তমঘা-ই-খেদমত উপাধি লাভ করেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে তিনি এই খেতাব বর্জন করেন।
সাহিত্য সাধনা নিরলস কর্মী, প্রচারবিমুখ এই বিরল ব্যক্তিত্ব ১৯৮৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর সিলেট শহরের পায়রা-৫৪, ঝরনার পারস্থ তার নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন।
তার প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হচ্ছে-বিশ্বনেতা, ফারুক চরিত্রের বৈশিষ্ট, সংবাদপত্র সেবায় সিলেটের মুসলমান, বিগত যুগের আদর্শ, আলোক স্তম্ভ, হারানো দিনের স্মৃতি।
সবাই মরহুমের আত্তার মাগফিরাত কামনা করবেন আল্লাহ যেন মরহুম জান্নাত নসিব করেন,আমিন
কোন মন্তব্য নেই