স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর, আমরা যখন বাংলাদেশে অধিকার আদায়ের নানা আন্দোলন দেখি, তখন একটি প্রশ্ন বারবার উঠে আসে—আসলেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোথায়? পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে আমাদের মেধাহীন পঙ্গু করার চেষ্টা করেছিল। ঠিক তার ৪৭ বছর পর, আমরা কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অনুসরণ করে দেশের উন্নতির জন্য সংগ্রাম করছি, নাকি মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক শিক্ষা ভুলে গিয়ে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার পথ ভুলে ফেলেছি?
রাজাকার এবং মুক্তিযোদ্ধাদের পার্থক্য
রাজাকার এবং মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে পার্থক্য কি ছিল? মাননীয় স্পিকার, আপনি কি বলতে পারেন? আমাদের ইতিহাসে ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬৬ এর ছয়দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণ অভ্যূথান, ৭১ এর স্বাধীনতা সংগ্রাম—এগুলো সবই ছিল অধিকার আদায়ের আন্দোলন। প্রত্যেকটি আন্দোলনেই ছিল জাতির দাবি, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগ্রাম। আজকের দিনে, যদি কোটা আন্দোলন চেতনা বিরোধী হয়, তবে সেই আন্দোলনগুলোকেও একইভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। কেননা, প্রতিটি আন্দোলনই ছিল মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ের চেষ্টা।
কোটা আন্দোলন: অধিকার আদায়ের চিত্র
কোটা আন্দোলন, যেটি এখনো চলছে, তা একদম সেই গরু চক্রের মতো, যা ৭১ সালে পাকিস্তানের শাসন কালে দেখা গিয়েছিল। যখন একটি গরুর পিছনের অংশে পাকিস্তানি শাসকদের পক্ষে সব কিছু ছিল এবং সামনের অংশে বাংলাদেশ। গরু মনের ইচ্ছা মতো ঘাস খেতো, খাদ্য পেতো, কিন্তু তার শোষণ চলতে থাকতো। ৭১ সালের পরবর্তী সময়েও যখন আমরা ১০০ আসনের পরীক্ষায় মাত্র ৪% কোটা কর্তৃক অধিকাংশ আসন দখল করতে দেখি, তখন সেই অবস্থা মনে পড়তে বাধ্য।
দেশের উন্নতি এবং চেতনা বিরোধী কার্যকলাপ
আজকের দিনে, আমাদের স্বাধীনতার কথা যদি মনে রাখা হয়, তাহলে কোনো শিক্ষার্থীর প্রতি অমানবিক আক্রমণ চালানো কি মুক্তিযুদ্ধের শিক্ষা? যদি আদায়ের জন্য গুলি করে, হত্যা করে মানুষকে ধ্বংস করা হয়, তাহলে আমরা মুক্তিযুদ্ধের শিক্ষা থেকে কতটা দূরে চলে যাচ্ছি?
আমাদের পূর্বপুরুষরা আমাদের শিক্ষা দিয়ে গেছেন, তাদের ত্যাগ আর সংগ্রাম দিয়ে তারা দেখিয়ে গেছেন, অধিকার কীভাবে আদায় করতে হয়। তবে তা শুধুমাত্র অস্ত্র বা শক্তি দিয়ে নয়, বরং সঠিক পথে, ন্যায়ের সাথে।
উন্নতি এবং চেতনার পথে
এই মুহূর্তে, আমাদের সকলকে মনে রাখতে হবে যে, একটি জাতি হিসেবে আমাদের একত্রিত হতে হবে, একে অপরকে সম্মান করতে হবে। আমাদের আন্দোলন যদি সঠিক চেতনায় পরিচালিত হয়, তবে তা সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবে। শুধু আন্দোলন করলেই হবে না, আমাদের সেই আন্দোলনকে সুশৃঙ্খল এবং ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতে হবে। আন্দোলনের জন্য গুলি, রক্ত, সহিংসতা নয়, বরং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য শান্তিপূর্ণ সংগ্রাম হতে হবে।
সুতরাং, চলতে থাকুক এই সংগ্রাম, ইনশাআল্লাহ, আমাদের জাতির উন্নতির পথে, যাতে আমরা মুক্তিযুদ্ধের আসল চেতনায় ফিরে আসতে পারি।