ইরান-ইসরায়েল ১২ দিনের যুদ্ধ: পরমাণু সন্দেহ, রাজনৈতিক নাটক এবং ট্রাম্পের নোবেল পুরস্কার চাওয়া

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ১২ দিনের আকস্মিক যুদ্ধ কীভাবে শুরু হলো, কে ছিল এর পেছনে, এবং কেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এই যুদ্ধ থেকে শান্তি আনার কৃতিত্ব দাবি করে নোবেল পুরস্কার চান—এই প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখেছে সেইসব রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক নাটক, যা একযোগে বিশ্ব রাজনীতিকে নাড়িয়ে দেয়।

ঢাকা, ৭ জুলাই ২০২৫ — ১৩ই জুন ২০২৫, রাত ৩টার সময়, ২০০টিরও বেশি ইসরায়েলি ফাইটার জেট হঠাৎ করেই ইরানের আকাশসীমায় প্রবেশ করে এবং ১০০টিরও বেশি পরমাণু, সামরিক এবং অবকাঠামোগত স্থাপনায় হামলা চালায়। ইসরায়েল এই অপারেশনের নাম দেয় "অপারেশন রাইজিং লায়ন"। তবে এই হামলার আগেও ইরান থেকে কোনো আগ্রাসন হয়নি, বরং ইসরায়েল নিজেই প্রথমে আক্রমণ চালায়।
সূত্র: CNN Middle East

এই হামলায় ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অফ স্টাফ, আইআরজিসি কমান্ডারসহ ছয়জন পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই ইরান পাল্টা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, কিছু হামলা তেলআবিব ও জেরুজালেমেও আঘাত হানে।
সূত্র: Al Jazeera Report

ট্রাম্পের হঠাৎ যুদ্ধ ঘোষণা ও অবসান

আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি বর্তমানে আবার নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত, এই যুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা নেন। ২১ জুন তিনি ইরানের পরমাণু স্থাপনায় বাঙ্কার বাস্টার বোমার মাধ্যমে হামলা চালানোর আদেশ দেন। যুক্তরাষ্ট্র এই প্রথমবারের মতো GBU-57 Massive Ordnance Penetrator ব্যবহার করে ইরানের ফোর্দো, নাটাঞ্জ এবং ইসফাহান কেন্দ্রগুলোতে হামলা করে।
সূত্র: Military.com

কিন্তু ২৩ জুন, ইরান কাতারে অবস্থিত আমেরিকার আল-উদেইদ বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে পাল্টা হামলা চালায়। তবে ইরান পূর্বেই যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করায় ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বললেই চলে।
সূত্র: Al Jazeera Qatar Strike

এরপর ২৪ জুন, হঠাৎ করেই ট্রাম্প একটি সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। বিশ্লেষকদের মতে, ইরান ও ইসরায়েল উভয়েরই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না। ট্রাম্পের লক্ষ্য ছিল নিজেকে শান্তিদূত হিসেবে উপস্থাপন করে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার প্রচেষ্টা।
সূত্র: White House Statement

যুদ্ধের পিছনের রাজনীতি: নেতানিয়াহুর বিচার ও ট্রাম্পের নির্বাচনী কৌশল

এই সময়টাতেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু-এর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলার শুনানি শুরু হয়। ৩ জুন থেকে তার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়, যেখানে তিনি ১,৭৭৮ বার "মনে নেই" বলেছেন। অনেক বিশ্লেষকের মতে, তিনি যুদ্ধ চালিয়ে গিয়ে এই বিচারকে বিলম্বিত করতে চেয়েছেন।
সূত্র: Times of Israel

২৬ জুন ট্রাম্প ইসরায়েলকে নেতানিয়াহুর দুর্নীতির বিচার বন্ধ করার আহ্বান জানান, যাকে তিনি "উইচ হান্ট" বলে অভিহিত করেন।
সূত্র: Haaretz

পরমাণু অস্ত্র বিতর্ক: সত্যিই কি ইরান বোমা বানাচ্ছিল?

ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে, ইরানের কাছে ৬০% সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ছিল যা ১০টি পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য যথেষ্ট। কিন্তু IAEA ও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জানায়, ইরান এখনো কোনো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না।
সূত্র: IAEA Press Conference সূত্র: CNN Intelligence Leak

২০১৫ সালের চুক্তি এবং ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত

২০১৫ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইরানের সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন, যাতে ইরান মাত্র ৩.৬৭% পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারত এবং IAEA ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করতে পারত।
সূত্র: Obama Statement Archive

কিন্তু ট্রাম্প ২০১৮ সালে ক্ষমতায় এসে এই চুক্তি বাতিল করে দেন, যাকে অনেকেই বলেন "ওবামার অর্জন মুছে ফেলার চেষ্টা"। এই সিদ্ধান্তই পরবর্তীতে ইরানের ইউরেনিয়াম মজুত বাড়ানোর পথ খুলে দেয়।
সূত্র: BBC – Trump Cancels Deal

সমাধান কী?

বিশ্লেষকদের মতে, এই উত্তেজনার স্থায়ী সমাধান হতে পারে নতুন পারমাণবিক চুক্তি। এতে ইরানকে নিরীক্ষণের আওতায় রাখা সম্ভব হবে এবং যুদ্ধের পথ পরিহার করা যাবে।

তবে প্রশ্ন থেকে যায়, ট্রাম্প এই কূটনৈতিক পথ বেছে নেবেন কি? কারণ যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে তিনি তার নির্বাচনী প্রচারণায় শক্ত অবস্থান দেখাতে চাচ্ছেন, যদিও তার সমর্থকদের অনেকেই এই পদক্ষেপে বিরক্ত।


নবীনতর পূর্বতন