বান্দরবান, ১৯ জুলাই: বান্দরবান সরকারি মহিলা কলেজের চারতলা ভবনের নির্মাণকাজে রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (১৯ জুলাই) বিকেলে কলেজ ভবনের বারান্দার ড্রপ ওয়ালে রডের ফাঁকে ফাঁকে চিকন বাঁশ ব্যবহারের বিষয়টি চোখে পড়ে স্থানীয়দের।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ৮১ লাখ টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউএন এন্টারপ্রাইজ, যার দায়িত্বে রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা উজ্জল বাবু।
রডের সঙ্গে বাঁশের ব্যবহার!
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণাধীন ভবনের ড্রপ ওয়ালের প্রতিটি ধাপে একটি রডের পাশাপাশি চিকন করে কাটা বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে। প্রায় ২০০ ফুটেরও বেশি এলাকাজুড়ে এই বাঁশ লাগানো হয়েছে।
কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, কয়েকদিন ধরেই ভবনের নির্মাণকাজ চলছিল। সকালে শ্রমিকরা বড় বড় বাঁশ কেটে চিকন করছিলেন, আর বিকালে দেখা যায়, সেগুলো রডের পরিবর্তে লাগানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের আশঙ্কা, যদি একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভবনের পুরো কাজ করে থাকে, তাহলে ভবনের অন্যান্য অংশেও এমন অনিয়ম থাকতে পারে।
কর্মীদের দাবি ও ঠিকাদারের বক্তব্য
নির্মাণ শ্রমিক আলী হোসেন জানান, “রডের ভেতরে বাঁশ দিলে কাজটি আরও শক্ত ও টেকসই হয়, তাই বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে। ঠিকাদার বিষয়টি জানেন।”
তবে ঠিকাদার উজ্জল বাবু জানান, “সিমেন্ট ভালোভাবে দেয়ালে বসানোর জন্য শ্রমিকরা বাঁশ ব্যবহার করেছে। তবে বিষয়টি আমার জানা ছিল না। জানার পরই আমি বাঁশ খুলে ফেলার নির্দেশ দিয়েছি। তবে নির্ধারিত পরিমাণ রডই ব্যবহার করা হয়েছে।”
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
বান্দরবান সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রদীপ বড়ুয়া বলেন, “আমি কলেজে না থাকলেও বিষয়টি শুনে ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। এটি গুরুতর অনিয়ম, আমি কলেজে ফিরে ব্যবস্থা নেব।”
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নুর হোসেন জানান, “আমি বর্তমানে চট্টগ্রামে চিকিৎসার জন্য আছি। তবে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকার পর আবার শুরু হওয়ায় বাঁশ কেন ব্যবহার করা হচ্ছে, তা আমার জানা নেই। আমি কাল বান্দরবানে গিয়ে ব্যবস্থা নেব।”
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল আজিজ উদ্দিন ভূইয়া বলেন, “উজ্জল বাবু প্রতিটি প্রকল্পেই বাড়াবাড়ি করছেন। মহিলা কলেজে বাঁশ দেওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি এ বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবো।”
নির্মাণকাজে অনিয়মের অভিযোগ
এ ঘটনা সামনে আসার পর স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি ভবনের নির্মাণকাজে এ ধরনের অনিয়ম ভবিষ্যতে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।